জান্নাতের নদীর নাম ও ঝর্না সমূহ
সুপ্রিয় বাণী কথার পাঠক বৃন্দ, আশা করি মহান আল্লাহ তা-আলার রহমতে আপনারা সকলে ভালো আছেন। আজকে আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি। আর যে বিষয়টি নিয়ে আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। তা আপনারা হয় তো অনেকে জানেন না? তা হলো, জান্নাত নামের অর্থ কি? জান্নাত কয়টি এবং জান্নাতের নদীর নাম ও ঝর্না সমূহ। তবে চলুন তাহলে শুরু করি আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয়, জান্নাতের নদীর নাম ও ঝর্না সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
জান্নাত নামের অর্থ কি
আপনি কি জানেন? জান্নাত নামের অর্থ কি? জান্নাত নামের অর্থ হচ্ছে বাগান, উদ্যান, আবৃত স্থান। আর আপনি যদি জানেন তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি না জেনে থাকেন। তাহলে জান্নাত নামের অর্থ কি? সে সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেল টি ধারাবাহিক ভাবে পড়তে থাকুন। আর জেনে নিনি জান্নাত নামের অর্থ কি?
জান্নাত ( جنة ) একটি আরবি শব্দ। ফার্সি ভাষায় জান্নাতকে বেহেশত বলে। জান্নাত কে বাংলা ভাষায় স্বর্গও বলা হয়। এই আরবী ভাষায় জান্নাত অর্থ বাগান, উদ্যান, আবৃৃত স্থান। ইসলামি পরিভাষায় জান্নাত বলতে বোঝায়, আখিরাতে ঈমানদার, মুমিন ও নেককার বান্দাদের জন্য, যে সুখময় ও চির স্থায়ী শান্তির আবাস স্থল তৈরি করে রাখা হয়েছে, তাকে জান্নাত বলে।
পবিত্র আল কুরআনে আট টি জান্নাতের নাম উল্লেখ রয়েছে তা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু আমরা অনেক মুসলমান, বেহেশত বা জান্নাত কয়টি, জান্নাতে কয়টি নদী আছে, জান্নাতের নদীর নাম ও ঝর্না সমূহ সম্পর্কে কিছুই জানিনা। আজ আমরা এই আর্টিকেল টি পড়ে জান্নাতের নদীর নাম ও ঝর্না সমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো।
জান্নাত কয়টি ও কি কি
আল্লাহ তাআলার জান্নাত কয়টি সে সম্পর্কে অনেক মুসলমান আমরা জানি না। আর জান্নাত কয়টি সে সমন্ধে জানার কখনো চেষ্টাও করিনি। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার পবিত্র গ্রন্থ্য আল কোরআনে জান্নাত কয়টি সে সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলার পবিত্র কিতাব আল কুরআনে, আট টি জান্নাতের নাম উল্লেখ রয়েছে। এই আট টি বেহেশত আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় রাসূলের অনুসারী এবং মুমিন বান্দাদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা জান্নাতের ভিতর এমন নাজ নিয়ামত রেখেছেন। যা পৃথিবীর কোন চামড়ার চোখ বা কোন মানুষের মনে কল্পনাও আসে নি। সুবাহান আল্লাহ।
আর এই আট টি জান্নাতের একটি তে যদি কেউ প্রবেশ করতে পারে। সেই ভাগ্যবান বান্দা অনন্তকাল পর্যন্ত সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করবে। সুবাহান আল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাই কে নেক আমল করে জান্নাতে যাওয়ায় তৌফিক করুক। আমিন। আল্লাহ তাআলার আট টি জান্নাতের নাম গুলো হলোঃ
১। জান্নাতুল ফিরদাউস ( جنۃ الفردوس )
২। জান্নাতুন্ নায়ীম ( جناتون نعيم )
৩। জান্নাতুল মাওয়া ( جناتول ماوا )
৪। জান্নাতুল আদন ( جنة العدان )
৫। জান্নাতু দারুস সালাম ( جنة دار السلام )
৬। জান্নাতুদ দারুল খুলদ ( جناتود دار الخلد )
৭। জান্নাতু দারুল মাকাম ( جنة دار المقام )
৮। জান্নাতু দারুল কারার ( جنة دار الكرار )
এই আটটি বেহেশত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে রাসুল! যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, আপনি তাদের এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নির্ঝর ধারা প্রবহমান থাকবে। সুরা বাকারা : আয়াত নং ২৫
এখন আমরা জানবো জান্নাতের নদীর নাম ও ঝর্না সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
জান্নাতের নদীর নাম ও ঝর্না সমূহ
আল্লাহ তাআলা তার নেককার মুমিন বান্দার জন্য চির স্থায়ী সুখের স্থান বেহেশত তৈরী করেছেন। যে মুমিন বান্দারা দুনিয়াতে সৎ কর্ম করেছে। আল্লাহ এবং রাসূলের দিকনির্দেশনা মত জীবন গড়ে তুলেছে। তারাই পরকালে আল্লাহ তাআলার বেহেশতে প্রবেশ করবে।
যেসব সৌভাগ্যবান মানুষ জান্নাতে যাবেন। আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য বেহেশতে বিচিত্র ধরনের হ্রদ, নদী, ফোয়ারা, প্রস্রবণ ও নির্ঝর ঝর্না ধারা প্রস্তুত করে রেখেছেন। দুনিয়ার কোনো নদী ও ঝর্নার সাথে এগুলোর তুলনা হয় না। আকার, আয়তন, স্বাদ, গন্ধ ও বর্ণ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
আল্লাহ তাআলা মুমিন ও নেককার বান্দার জন্য, জান্নাতে চারটি নদী প্রবাহিত রেখেছেন। আল্লাহ তাআলার তৈরী, জান্নাতের নদীর নাম ও ঝর্না সমূহ সম্পর্কে আপনারা যারা জানেন না। তারা এই আর্টিকেল টি পড়ে জান্নাতের নদীর নাম ও ঝর্না সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
জান্নাতের নদীর নাম চার টি
আল্লাহ তাআলা জান্নাতে চার টি নদী বান্দার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। জান্নাতের চারটি নদীর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে পানির, দ্বিতীয় টি মধুর, তৃতীয় টি দুধের আর চতুর্থ টি শরাবের। জান্নাতের এই চারটি নদী থেকে আরও অসংখ্য ছোট ছোট নদী প্রবাহিত থাকবে। বেহেস্তের প্রতিটি প্রাসাদের সঙ্গে এই চার নদীর সংযোগ স্থাপন থাকবে। জান্নাতের নদী গুলোর কস্তুরির পাহাড় ও আদন থেকে উৎসারিত হয়ে গর্তের মতো বিশাল বিস্তৃত নিচু স্থানে জমা হয়ে থাকে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿ مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ ﴾ [محمد: ١٥]
মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত সত্য, তাতে আছে নির্মল পানির নহর সমূহ, আছে দুধের নহর সমূহ যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়। আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহর সমূহ, আছে পরিশোধিত মধুর নহর সমূহ। এছাড়া সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রত্যেক প্রকারের ফলমূল।”(মুহাম্মদঃ ১৫)
মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
« إن في الجنة بحر الماء , وبحر العسل , وبحر اللبن , وبحر الخمر , ثم تشقق الأنهار بعد » . ( رواه الترمذي ) .
নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে থাকবে পানির নদী, মধুর নদী, দুধের নদী এবং মদের নদী অতঃপর নদী-নালার ব্যবস্থা করা হবে। তিরিমিযীঃ ২৫৭১
আল্লাহ তাআলা বলেন, দুনিয়ায় যারা মদ পান করে। তারা জান্নাতের শরাব থেকে বঞ্চিত থাকবে। পানি, মধু, দুধ ও শরাব কখনও বিস্বাদ বা বিবর্ণ হবে না। ইবনে হিব্বান- ১০/২৪৯, তিরমিজি- ২৫৭১, কানযুল উম্মাল- ৩১৮৪৬, ৩৯২৩৯, ইবনে আবি শায়বা- ১৫৯৩৮, তাফসির ইবন কাসির- ৪/১৭৬।
জান্নাতের বরকতময় নদী কাউসার
জান্নাতের যে চার টি নদীর নাম উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে একটি বিশেষায়িত নদীর নাম হচ্ছে ‘কাউসার’। এটা অফুরন্ত কল্যাণ ও বরকতের আধার। প্রায় ৫০ জন সাহাবি এই ‘কাউসার’-এর বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে ‘কাউসার’ বিশেষভাবে দান করেছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন আমরা মদিনার মসজিদে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাক্ষাতে উপস্থিত হলাম।
হঠাৎ তার মধ্যে তন্দ্রা অথবা অচেতনতার ভাব দেখা দিল। কিছুক্ষন পর তিনি হাসিমুখে মাথা উঁচু করলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার হাসির কারণ কী? আমরা কি জানতে পারি। হযরত মোহাম্মদ ( সাঃ ) বললেন, এই মুহূর্তে আমার ওপর একটি সুরা অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহ সহ তার উপর নাযিল কৃত সুরা ”কাউসার” পাঠ করলেন। আর বললেন, ‘কাউসার’ কী তোমরা জানো?
আমরা বললাম, আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল ভালো জানেন। হযরত মোহাম্মদ ( সাঃ ) বললেন, এটা জান্নাতের একটি নদী। আমার পালনকর্তা এই নদীটি আমাকে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। আর এই নদীতে রয়েছে অজস্র কল্যাণ। এই নদী থেকে কেয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে পারবে। সুবাহান আল্লাহ।
আল্লাত তাআলা আমাদের সবাই কে এই অজস্র কল্যাণ ও বরকতময় কাউসার নদী থেকে। পানি পান করার তৌফিক দান করুক। আমিন।
এখন আমরা জেনে নেব জান্নাতের ঝর্না সমূহ সম্পর্কে,
জান্নাতের ঝর্না সমূহ তিন টি
আল্লাহ তাআলা তার মুমিন বান্দার জন্য নদীর সাথে ঝর্না ধারার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। ঝর্না গুলো বাগানের পাশ দিয়ে প্রবাহমান থাকবে। ঝর্না সমূহ বাগানের সৌন্দর্য বাড়াবে জন্য একত্রে থাকবে। একই স্থানে নানা ধরনের ফুল ফলের বাগান বিরাজ করবে। বড় বড় ছায়াদার বৃক্ষরাজি, ঝর্ণা সমূহ, সাথে বিশাল আয়তনের অট্টালিকা সমূহ প্রস্তুত থাকবে। পাশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদী, একত্রে এগুলোর সমাবেশ ঘটলে পরিবেশ কত মোহিনী মনোমুগ্ধকর হতে পারে। তা লিখে বা বর্ণনা করে বুঝানো কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। শুধুমাত্র মনের চোখে কল্পনার ছবি দেখে কিছুমাত্র অনুমান করা সম্ভব।
জান্নাতের ঝর্না সমূহ তিন টি হলো :
১। জান্নাতের কাফুর ঝর্নাঃ
এই ঝর্নার পানি হবে সুঘ্রাণ ও সুশিতল। এই ঝর্নার পাশ দিয়ে যে জান্নাতি মেহমান যাবেন। তিনি এই কাফুর ঝর্নার সুঘ্রান অনুভব করতে পারবেন। যা তিনি আগে কখনো অনুভব করেন নি। দুনিয়ার কোন সুঘ্রানের সাথে এই ঝর্নার পানি তুলনা করা যায় না। কাফুর ঝর্নার সুশিতল পানি পান করলে দেহ ঠান্ডা হয়ে যাবে। জান্নাতের মধ্যে বান্দা যখন এই পানি পান করবে। তার আর সহজে পিপাসা হবে না।
২। জান্নাতের সালসাবিল ঝর্নাঃ
এই ঝর্নার পানি হবে ফুটন্ত চা ও কপির ন্যায় সুগন্ধি ও উত্তপ্ত। জান্নাতের মধ্যে বান্দা যখন চা অথবা কফি ন্যায় কিছু খেতে চাইবে। তখন এই সালসাবিল ঝর্না থেকে ঐ বান্দাকে দেওয়া হবে। এই সালসাবিল ঝর্নার পানি এতটা সুগন্ধি ও উত্তপ্ত হবে। যা দুনিয়ার কেউ কল্পনাও করতে পারে নি।
৩। জান্নাতের তাছনীম ঝর্নাঃ
এই ঝর্নার পানি থাকবে নাতিশীতোষ্ণ। তাছনীম ঝর্নার পানি কখনো উত্তপ্ত গরম বা ঠান্ডা হবে না। আল্লাহ তাআলা এই তাছনীম ঝর্না এমন ভাবে সৃষ্টি করেছেন। তার নেককার বান্দা যেন কখনো ঠান্ডা অথবা উত্তপ্ত গরম অনুভব না করতে পারে।
আল্লাহ তাআলা সূরা যারিয়াতে বলেছেন,
إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ ﴾ [الذاريات: ١٥، ١٦]
‘‘অবশ্য মুমিন মুক্তাকী বান্দারা সেদিন বাগান ও ঝর্না ধারা সমূহের পরিবেষ্টনে অবস্থান করবে। তাদের রব তাদেরকে যা দেবে আনন্দে তারা তা গ্রহণ করতে থাকবে। কেননা, তারা এর আগে মুহসিন (সদাচারী) বান্দা হিসেবে পরিচিত ছিলো।’’ (সূরা যারিয়াতঃ আয়াত নং- ১৫-১৬)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে হাজির হওয়ার ভয় রাখে তার ইবাদত করে। তার জন্য বেহেশতে রয়েছে দুটি উদ্যান। উভয় উদ্যানই ঘন শাখা পল্লব বিশিষ্ট। উভয় উদ্যানে আছে বহমান দুটি ঝর্না।’ (সুরা আর-রাহমান : ৪৬-৫০)। এই ঝর্না ও নদীর উত্তাল প্রবাহ মুহূর্তের জন্য থেমে থাকবে না। দুই নদীর তীরে অবসর ও বিশ্রামের জন্য থাকবে সারি সারি তাঁবু, আনন্দ উপকরণ ও সেবক সেবিকা।
বন্ধুরা, জান্নাতের নদীর নাম ও ঝর্না সমূহ গল্প থেকে বিশেষায়িত নদী কাউসার সমন্ধে যা জানতে পেলাম। সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাই কে বোঝার এবং সে অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আপনি আরো পড়তে পারেন, যে তিনটি আমল আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। ধন্যবাদ