শিরক শব্দের অর্থ কি ? শিরক কত প্রকার ও কি কি ?

জেনে নেই শিরক শব্দের অর্থ কি, কত প্রকার ও কি কি

শিরক শব্দের অর্থ কি ? শিরক কত প্রকার ও কি কি ? এই সব বিষয়ে আমাদের জানা একান্তই জরুরী। কেননা আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন শুধু মাত্র বড় ও ছোট শিরক এর গুনাহ ছাড়া। তাই আমাদের শিরক থেকে বাচার জন্য শিরক কি তা জানতে হবে। কিভাবে শিরকে আকবার হতে পারে কত প্রকার শিরক রয়েছে সেই সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। আজকে আমরা শিরক শব্দের অর্থ কি ? শিরক কত পেওকার ও কি কি এই সম্পর্কে জানবো। চলুন শুরু করা যাক-

জেনে নেই শিরক শব্দের অর্থ কি ?

শিরক শব্দের অর্থ কি ? এই শিরক একটি আরবি শব্দ। শিরক শব্দের আভিধানিক অর্থ সমকক্ষ করা, সংমিশ্রন করা, শরিক, অংশীদার করা ইত্যাদি।

ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায় যে সকল গুনাবলী শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তাআলার রয়েছে, সেসব গুনাবলী দিয়ে অন্য কাউকে গুনান্বিত করা বা ভাবা অর্থাৎ আল্লাহর সাথে কোন কিছুর শরিক করা বা অংশীদার বানানোই হচ্ছে শিরক।

মানব জীবনের সবচেয়ে বড় গুনাহ হল শিরক। মহান আল্লাহ তাআলা শিরক সম্পর্কে বলেন,

إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

অর্থাৎ, নিশ্চয় শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অপরাধ।(সূরা লোক্বমান- ১৩)

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? উত্তরে মুহাম্মদ (সা) বললেন, তুমি কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ নির্ধারণ করবে; অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরিক করবে না। (সূরা নিসা – ৪:৩৬)

ইসলামে শিরক অর্থ একটি অমার্জনীয় অপরাধ। মৃত্যু নিকটবর্তী হবার পূর্বে আল্লাহর নিকট শিরকের ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। শিরক এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা না চাইলে, মৃত্যুর পর আল্লাহ বান্দার সব ভুল ক্ষমা করতে পারেন কিন্তু এই শিরকের অপরাধীকে আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না। তাই বান্দার দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় শিরক এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

শিরক কত প্রকার ও কি কি ?

শিরক দুই প্রকার। যথাঃ

১। বড় শিরক ( শিরকে আকবার )
২। ছোট শিরক ( শিরকে আসগার )

বড় শিরক ( শিরকে আকবার ) কি

শিরকে আকবার হল আল্লাহ তাআলার সাথে অন্য কোন কিছুর শরিক করা। মহান আল্লহ তাআলার ছাড়া কোন ব্যক্তি বস্তুর উদ্দেশ্যে ইবাদত আদায় করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে মান্নত করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে কুরবানি করা, প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করা এবং বিপদ দূর করার ন্যায় যে সকল কাজের ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সম্পাদন করারা ক্ষমতা রাখে না সেই সব কাজের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে আশা করা শিরক।

আজকাল মাজারে, বুযুর্গানে দ্বীনের কবর সমূহকে কেন্দ্র করা শিরক এর চর্চা করা হচ্ছে। এই ধরনের বড় শিরক সম্পর্কে
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন – وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهَ

অর্থাৎ, তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, কোন উপকার। আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী।(সূরা ইউনুছ ১০:১৮)

শিরকের গুনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করেন না। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ﴾ [النساء: ٤٨]

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ শিরকের গোনাহ ক্ষমা করেন না (নিসা ১১৬)। হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেন,

-Advertisements-

«مَنْ لَقِىَ اللَّهَ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ دَخَلَ النَّارِ»

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে শিরক না করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে শিরক করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে (মুসলিম)।

বড় শিরক সম্পাদনকারী সম্পূর্ণরুপে ইসলাম থেকে বাতিল হয়ে যাবে। কারণ শিরক কুফরির নামান্তর। শিরকের ফলে বান্দার কৃত নেক আমল কোন কাজে আসবে না। বড় শিরক সম্পাদনকারী ব্যক্তি যদি শিরকের উপরেই মৃত্যু বরণ করে, এবং তোবা না করে তাহলে সেই ব্যক্তির ঠিকানা হবে চির স্থায়ী জাহান্নাম।

ছোট শিরক ( শিরকে আসগার ) কি

শিরকে আসগার ( ছোট শিরক ): যে সকল কথা ও কাজের মাধ্যমে মানুষ শিরকের দিকে ধাবিত হয় সেই সকল কথা ও কাজকে ছোট শিরক বলে। শিরকে আসগার সম্পাদনকারী বান্দা ইসলাম থেকে বাতিল হয়ে যাবে না। তবে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের আকিদায় ত্রুটি ও কমতি সৃষ্টি করে। ছোট শিরক অর্থাৎ শিরকে আসগার বড় শিরক এ লিপ্ত হবার ওসীলা ও কারণ।

ছোট শিরক সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেন,

«إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ ” قَالُوا: وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: ” الرِّيَاءُ»

অর্থাৎ, যে বিষয়ে আমি তোমাদের উপরে সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তা হল ছোট শিরক। ছাহাবায়ে কেরাম (রা) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! ছোট শিরক কি? তিনি বললেন, ছোট শিরক হচ্ছে লোক দেখানো ইবাদত (মুসলিম)। একই ভাবে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করাও ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত। নবী করীম (সা) বলেন,

«مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ»

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করে, সে কুফরী করে অথবা শির্ক করে (তিরমিযী)।

ছোট শিরক আবার দুই প্রকার। যথা-

১। স্পষ্ট বা প্রকাশ্য শিরক
২। গুপ শিরক

স্পষ্ট বা প্রকাশ্য শিরকঃ এই প্রকারের শিরক কথা ও কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। কথার ক্ষেত্রে শিরক হল, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুর নামের কসম ও শপথ করা। কাজের ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের অজান্তেই অনেক শিরক করে থাকি। যেমন, বিপদ আপদ দূর করার জন্য কড়ি বা দাগা বাধা, বদ নজর থেকে বাঁচার জন্য তাবীজ , কপালে কালো কালির ফোঁটা ইত্যাদি দেওয়া। এই সব ব্যাপারে অন্তরে যদি এই রকম বিশ্বাস থাকে যে এই সকল উপকরণ বিপদ আপদ দূর করার মাধ্যমন তাহলে শিরকে আসগার অর্থাৎ ছোট শিরক হবে।

যদি কেউ এই রকম বিশ্বাস করে যে, এই সকল বস্তু বা উপকরণ স্বয়ং বিপদ আপদ , বদ নজর থেকে বাঁচাবে তাহলে তা হবে বড় শিরক বা শিরকে আকবার। কারণ এতে গাইরুল্লাহর প্রতি সেই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে যা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট।

গুপ্ত শিরক বা গোপন শিরকঃ গুপ্ত শিরক বা গোপন শিরক এই ধরনের শিরক ইচ্ছা, সংকল্প, নিয়তের মাধ্যমে হয়ে থাকে। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত করা গোপন শিরকের অন্তর্গত। অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় এমন কোন কাজ সম্পাদন করে, তার দ্বারা মানুষের প্রসংসা লাভের ইচ্ছা। যেমন, বেশি দান সাদকা করা, যাতে মানুষ তার প্রশংসা করে। জোড়ে তিলাওয়াত করা যাতে মানুষ শুনে তার গুণগান করে।

যদি কোন আমলে রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত থাকে, তাহলে মহান আল্লাহ তাআলা সেই আমল বাতিল করে দেন।

দুই প্রকার শিরক এর পার্থক্যঃ

১। কোন ব্যক্তি বড় শিরক অর্থাৎ শিরকে আকবার এ লিপ্ত হলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। অন্যদিকে ছোট শিরক অর্থাৎ শিরক আসগারের ফলে সে ইসলাম থেকে বের হয় না।

২। বড় শিরক অর্থাৎ শিরকে আকবার বান্দার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেয়, কিন্তু শিরকে আসগার সব আমল নষ্ট করেনা। যে আমল গুলোতে বিয়া বা দুনিয়ার সম্মান অর্জনের লোভ সংমিশ্রিত রয়েছে সেই আমল গুলো শুধু নষ্ট হয়ে যাবে।

শিরক কি ? শিরক কত প্রকার ও কি কি ? আল্লাহ আমাদের এই সম্পর্কে আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আল্লাহ পাক আমাদের ছোট বড় শিরক থেকে বেঁচে আমল করার তৌফিক দান করুন।

আপনি আরো পড়তে পারেন, কবিরা গুনার মধ্যে তিনটি জঘন্যতম গুনাহ। 

Advertisements

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More