কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত সমূহ যা জানা জরুরী
কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত সমূহ
কোরবানির অর্থ হল উৎসর্গ করা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় বান্দা কোরবানি করে থাকে। কিন্তু কোরবানি কবুল হল কি না তা আমরা জানি না। তবে কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। সেই শর্ত গুলো পালন করলে আশা করা যায় কোরবানি কবুল হয়েছে। এজন্য কোরবানির শর্ত গুলো এবং কোরবানি কবুল না হওয়ার কারণ গুলো কি কি তা জানতে হবে।
আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে কিভাবে কোরবানি দিলে আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে। কোরবানি কবুল হোয়ার শর্ত গুলো কি কি। কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য যে সকল শর্ত রয়েছে তা পালন করলেই ইনশাআল্লাহ কোরবানি কবুল হয়ে যাবে। আজকে আলোচনা করবো কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য শর্ত গুলো নিয়ে। চলুন শুরু করা যাক –
কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত
ইসলামে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের জন্য পশু কোরবানির বিধান রয়েছে। তবে আপনার কোরবানি কবুল তখনি হবে যখন আপনি কোরবানির শর্ত গুলো পূরণ করবেন। কোরবানি একটি আর্থিক ইবাদত। আর এই আর্থিক ইবাদত কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য প্রধান দুইটি শর্ত রয়েছে। কোরবানি কবুল হোওয়ার শর্ত দুটি হল-
নিয়ত : কোরবানির প্রথম শর্ত
কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য প্রথম যে শর্ত টি রয়েছে তা হল ইখলাসুন নিয়ত বা নিয়ত খাঁটি করা। কোরবানি হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে বা আশায় কোরবানি হলে তা কবুল হবে না। অনেকেই রয়েছে গোসত খাওয়ার বা প্রেস্টিজ রক্ষার জন্য কোরবানি করে থাকে।
অনেকে মনে করে কোরবানি না করলে লোকে কি বলবে তাই জন্য কোরবানি করে। এই রকম নিয়ত হলে আল্লাহর কাছে কোরবানি কবুল হবে না। এক কথায় লোক দেখানো কোন ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। ইবাদত সে হোক কোরবানি বা অন্য কোন ইবাদত তা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোনো হুকুম দেওয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করবে। (সূরা আল-বাইয়েনা : ৫)
অনেকে রয়েছে সমাজের মানুষের বাহবা পাবার জন্য সবচেয়ে বড় গরু কোরবানি দিতে বদ্ধপরিকর। তাদের নিয়তে যে ভেজাল রয়েছে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। কোরবানির পশু ছোট হোক বা বড় হোক তাকওয়ার বিষয়টি ও সামনে রাখতে হবে। নিয়ত ঠিক হলে কোরবানির গরু ছোট বড় কোন বিষয় নয়।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা বললেন, এ (পশু) গুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর নিকট পৌঁছে না। কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া। (সূরা আল-হজ্জ : ৩৭)
এজন্য কোরবানি দিতে হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে আর কোন কিছুর আশায় নয়। এজন্য নিয়ত হল কোরবানি কবুল হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত ।
হালাল উপার্জন : কোরবানি কবুল হওয়ার দ্বিতীয় শর্ত
আপনার কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য দ্বিতীয় যে শর্ত টি রয়েছে তা হল হালাল উপার্জন। কোরবানি একটি আর্থিক ইবাদত। তাই আপনার কোরবানির জন্য ক্রয় করা পশুটি হতে হবে হালাহ উপার্জনে। অর্থাৎ কোরবানির জন্য পশুটি হালাহ অর্থ দিয়ে কিনে কোরবানি করতে হবে। অন্যথায় কোরবানি কবুল হবে না।
কোরবানি হতে হবে প্রিয় নবী করীম (সা) এর অনুকরণে ও অনুসরণে। এর এর অন্যথা হলে নিয়ত ঠিক থাকলেও কোরবানি কবুল হবে না। অনুকরণে ও অনুসরণে গড়মিল থাকলে হাশরের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে।
প্রধান এই শর্ত দুটি কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য পালন করতেই হবে।
আল্লাহর কাছে কোরবানি কবুল হওয়ার এই দুটি শর্ত ছাড়াও আরো কিছু কারণে কোরবানি কবুল হয় না। সে সব কারণে কোরবানি কবুল হয়না। এখন আমরা জানবো কোরবানি কবুল না হওয়ার কারণ সম্পর্কে।
কোরবানি কবুল না হওয়ার কারণ
কোরবানি কবুল না হওয়ার এমনও কিছু কারণ রয়েছে যা আমরা মনেই করি না যে এই কারণে কোরবানি কবুল হবে না। সে রকল কিছু আকারণ হল-
১। কোরবানি কবুল না হওয়ার অন্যতম কারণ কোরবানির পশু নির্বাচন করতে না পারা। যেমন কোরবানির পশুর বয়স, সুস্থতা বা নিরোগ হওয়ার বিষয়ে অবগত থাকতে হবে। কোরবানির পশু হতে হবে নিখুঁত ও সুন্দর হৃষ্টপুষ্ট।
২। কোরবানির সময় যখন ভাগে কোরবানি দিবেন তখন শরীকদের বিষয়ে খোজ খবর নেওয়া। কারণ কোন শরীকের উপার্জনে ভেজাল থাকলে বাকি শরীকদের কোরবানি কবুল হবে না। তাই শরীকদের উপার্জন দেখে তাদের সাথে কোরবানিতে অংশ নেওয়া।
৩। এছাড়া অংশীদারের ভিত্তিতে কোরবানি করলে, গোশত ওজন করে বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েজ নেই। তবে হাড্ডি-মাথা ইত্যাদি যেসব অংশ সাধারণত সমানভাবে ভাগ করা যায় না, সেগুলো অনুমান করে ভাগ করা যাবে। এতে সামান্য কমবেশি হলে সমস্যা নেই। (ফাতাওয়া কাজিখান : ৩/৩৫১)
৪। আমরা অনেক সময় বলে থাকি অমুকের নামে কোরবানি বা আমার মায়ের নামে বা বাবার নামে। এটি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা। এইভাবে কোরবানি দিলে আল্লাহর কাছে কোরবানি কবুল হয় না। কোরবানি একমাত্র হবে আল্লাহর নামে। তবে হ্যা এটা হতে পারে আমার পক্ষ থেকে বা আমার বাবার বা মায়ের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি। এখানে কথাটি হবে পক্ষ থেকে নামে নয়।
এই সব কারণে কোরবানি কবুল হয় না। তাই কোরবানি কি কারণে কবুল হয় না এই বিষয়াদি জেনে কোরবানি করা উত্তম। এজন্য কোরবানি দেওয়ার আগে কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম ও পদ্ধতি ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান রাখা।
মহাল আল্লাহ আমাদের সবাইকে উপরোক্ত কোরবানির শর্ত সম্পর্কে বোঝার ও সে অনুযায়ী কোরবানি করার তৌফিক দান করুন। আমিন