ইতিকাফ কি ? ইতিকাফের নিয়ত , গুরুত্ব ও ফজিলত

ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

রমজান মাসে আমরা সাধারণত ইতিকাফ করে থাকি। ইতিকাফ কি , ইতিকাফের নিয়ত , গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আজকে আমরা অবগত হব। ইসলামে ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত রয়েছে। ইতিকাফ এমন একটি ইবাদত যেখানে সমস্ত কার্যাদি থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়। ইতিকাফের ফজিলত এর মধ্যে আর একটি হল শবে কদর তালশ করা। ইনশাআল্লাহ আজকে আমরা আলোচনা করবো ইতিকাফ কি, ইতিকাফের নিয়ত বাংলা কিভাবে করবো এবং ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে। চলুন শুরু করা যাক-

ইতিকাফ কি ও ইতিকাফের অর্থ

ইতিকাফ কি ও এর অর্থঃ রমজানের ইতিকাফ শব্দটি একটি আরবি শব্দ। এই ইতিকাফের অর্থ স্থির থাকা বা অবস্থান করা।। ইসলামি শরীয়তের বিধানের ভাষায় সমস্ত জাগতিক কার্যাদি ও পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সওয়াবের উদ্দেশ্যে মসজিদে বা ঘরের নির্দিষ্ট একটি স্থানে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয়। আর যিনি ইতিকাফ করেন তাকে মুতাফিক বলা হয়।

রমজান মাসের ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নত। ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, যার উল্লেখ পবিত্র কুরআন শরীফে রয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা মসজিদসমূহে অবস্থায় স্ত্রীদের গভীর সান্নিধ্যে গমন করো না। (সূরা বাকারাহ: আয়াত ১৮৭)।

রমজানের ইতিকাফ করার জন্য নিয়ত করলে ইতিকাফ কারীরা ২০ রমজান আসরের পর মসজিদে অবস্থান করবেন। মসজিদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পর্দা দিয়ে ঘরের মত ঘেরাও করবেন। এমন ভাবে ঘেরাও করবেন যেন, জামায়াতের সময় সেই পর্দা খুলে মুসল্লিদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা করা যায়। সেই নির্দিষ্ট স্থানে পানাহার, শয়ন করবেন। আর কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া মসজিদের সেই ছাউনির বাহিরে যাবেন না।

ইতিকাফের নিয়ত যেভাবে করবেন

রমজানের সুন্নত বা নফল ইতিকাফের জন্য নিয়ত হল মনের ইচ্ছা, সংকল্প বা প্রতিজ্ঞা করা। ইতিকাফের নিয়ত অন্তরের কাজ মুখের উচ্চারণ খুব জরুরী বিষয় নয়। আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য মনে ইতিকাফের সংকল্প বা ইচ্ছা করাই ইতিকাফের নিয়ত । তবুও অনেকেই অন্তরে স্বীকার ও মুখে বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। নিচে ইতিকাফের নিয়ত আরবিতে দেওয়া হল।

ইতিকাফের নিয়ত আরবিতেঃ নাওয়াইতু আন সুন্নাতুল ইতিকাফ-মাদুমতু হাজাল মাসজিদ।

ইতিকাফের নিয়ত বাংলা অর্থঃ আল্লাহর নামে, আমি প্রবেশ করলাম ও তাঁর উপরই ভরসা করলাম এবং ইতিকাফ করার ইচ্ছা পোষণ করলাম।

এভাবে ইতিকাফের জন্য মসজিদে ঢোকার সময় অন্তরে ইতিকাফের নিয়ত করবেন। ইতিকাফের সময়টাকে বেশি বেশি নফল ইবাদত করা। এই সময়টায় ইতিকাফের অনেক ফজিলত লাভ করা যায়।

ইতিকাফ কি ইতিকাফের নিয়ত , গুরুত্ব ও ফজিলত

রমজান মাসে ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

রমজান মাসে ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) ইতিকাফের গুরুত্ব এত দিতেন যে কখনো তা ছুটে গেলে ঈদের মাসেই আদায় করে নিতেন। নবী করীম (সা) বলেন, যে ব্যক্তি সারাজীবনে একবার হলেও ইতিকাফ করবে, কিয়ামতদের দিন জাহান্নাম তার কাছ তজেকে ১৫শ বছর পথ দূরে থাকবে। তাহলে হাদিস থেকে বোঝা যাচ্ছে ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত ইসলামে অনেক।

-Advertisements-

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি যখন কাবা গৃহকে মানুষের জন্য সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকে (মাকামে ইব্রাহিম) নামাজের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো। আর যতক্ষণ তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করো, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সঙ্গে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেওয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেয়ো না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন মহান আল্লাহ তাঁর আয়াতগুলো মানুষের জন্য, যাতে তারা (মানুষ) তাকওয়া লাভ করতে পারে। (সুরা-২ [৮৭] আল বাকারা (মাদানি), রুকু: ১৫/১৫, আয়াত: ১২৫, মঞ্জিল: ১, পারা: ১ আলিফ লাম মিম, পৃষ্ঠা: ২০/১৮)।

হজরত আয়িশা (রা) বর্ণনা করেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সা) আজীবন রমজানের শেষ দশকগুলো ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের পরও তাঁর বিবিগণ ইতিকাফ করতেন। (বুখারি ও মুসলিম; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৪৬, পৃষ্ঠা: ১২৯)।

রমজান মাসে ইতিকাফের গুরুত্ব

রমজান মাসে ইতিকাফের গুরুত্ব অধিক। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ তার জাগতিক সব কিছু ছেড়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যায়। রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা ই কিফায়া। এজন্য মসজিদে মহল্লার লোক জনের পক্ষ থেকে একজন হলেও ইতিকাফ করতে হয়। যদি কোন মহল্লার মসজিদে কেউ ইতিকাফ না করে তাহলে ঐ মহল্লার সবাই দায়ী থাকবে। আর মহল্লার পক্ষ থেকে কেউ একজন আদায় করলে মহল্লার সবাই দায়মুক্ত হবে। তবে যিনি বা যারা ইতিকাফ আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তারাই ইতিকাফের সওয়াবের অধিকারী হবেন।

তবে আজকাল দেখা যাচ্ছে কোন কোন মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম বা কমিটির লোকজন, এমনকি মহল্লার স্থানীয় কেউই ইতিকাফ করছেন না। সেই সব মসজিদে বাইরে থেকে কাউকে ভাড়া করে এনে ইতিকাফ করান। এতে ইতিকাফের গুরুত্ব , ফজিলত কিংবা উদ্দেশ্য অর্জন হয় না।

১০ দিনের কম যেকোনো পরিমাণ সময় ইতিকাফ করলে সেই ইতিকাফ নফল ইতিকাফ হিসেবে গন্য হবে। ইতিকাফের জন্য রোজা শর্তারোপ করা রয়েছে। অর্থাৎ ইতিকাফের সময় যে ব্যক্তি বা যারা ইতিকাফ করবে তাদের রোজা রাখতে হবে। তবে অল্প সময়ের জন্য অর্থাৎ এক দিনের কম সময়ের জন্য রোজা শর্ত প্রযোজ্য নয়। নফল ইতিকাফের জন্য মানত বা ইতিকাফ শুরু করে ছেড়ে দিলে , সেই ইতিকাফ পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়। এবং ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত ও একদিনের কম সময়ে ইতিকাফ আদায় হবে না।

ইতিকাফের অন্যতম গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য হল শবে কদর প্রাপ্তি। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করলে শবে কদর প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। আল্লামা হাফেজ ইবনে রজব (র) বলেছেন যে, ইতিকাফের উদ্দেশ্য হল সৃষ্টির সাথে সাময়িকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক কায়েম করা। আল্লাহর সাথে পরিচয় যত দৃঢ় হবে, সম্পর্ক ও ভালোবাসা ততো গভীর হবে এবং তা বান্দাকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে।

পুরুষদের জন্য মসজিদে ইতিকাফ করতে হয় আর নারীরা বাড়ির নির্দিষ্ট কক্ষে ইতিকাফ করবেন। ইতিকাফ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ো না, যখন তোমরা ইতিকাফরত থাকবে মসজিদে (নির্দিষ্ট স্থানে)। (সুরা-২ [৮৭] আল বাকারা)

ইসলামে ইতিকাফের ফজিলত

রমজানের ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত রয়েছে। ইতিকাফের ফজিলত অনেক। এর মধ্যে মধ্যে একটি হল, ইতিকাফ অবস্থায় ইতিকাফকারী ফরজ ইবাদতের বাইরে অন্য কোন নফল ইবাদত না করলেও তিনি ইতিকাফের সওয়াব পাবেন। ইতিকাফকারী যদি আরো নফল ইবাদত করে তাহলে আরো বেশী ফজিলত লাভ করবে। নফল ইবাদত সমূহের মধ্যে রয়েছে, কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা, নফল নামাজ পড়া, পূর্বের কাজা নামাজ আদায় করা, দোয়া-দরুদ পাঠ করা, জিকির করা, তাসবীহ তাহলীল পাঠ করা ইত্যাদি।

রমজান মাসের ইতিকাফের ফজিলত সমুহের গুরুত্ব অনেক। ইতিকাফের নিয়ত করা ইতিকাফকারীর জন্য দুইটি হজ্জ ও দুইটি ওমরার সওয়াব রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা) ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে বলেন যে, যে ব্যক্তি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, তার জন্য দুইটি হজ ও দুইটি ওমরার সওয়াব রয়েছে। (বায়হাকী)

ইতিকাফকারী এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আর নামাজের এ অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন। যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে। তারা বলতে থাকে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন। যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে এবং নামাজ তাকে আটকে রাখবে, তার পরিবারের কাছে যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না। ফেরেশতারা তার জন্য এভাবে দোয়া করতেই থাকবে। (মুসলিম-৬০১১)

ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত ইসলামে অপরিসীম। ঈমান বৃদ্ধি করার একটি বড় সুযোগ হল ইতিকাফ। মহান আল্লাহ আমাদের মুসলিম উম্মাহকে ইতিকাফ কি, ইতিকাফের নিয়ত যেভাবে করতে হয় এবং ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জেনে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার তৌফিক দান করুন। আমিন

আপনি আরো পড়তে পারেন, যে তিনটি আমল আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

Advertisements

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More