কোরবানির পশু নির্বাচন করার নিয়ম । কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য

কোরবানির পশু নির্বাচন করার নিয়ম । কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য

কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের একটি। যাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ রয়েছে তাদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব। কোরবানির জন্য উত্তম পশু দিয়ে কোরবানি করা সবচেয়ে ভাল। সব রকম পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নেই। কোরবানির পশু নির্বাচন কোরবানির গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোরবানি কবুল হওয়া কোরবানির পশুর বয়স , বৈশিষ্ট্য , ত্রুটি সব কিছুর উপর নির্ভর করে।

কোরবানি সব রকমের পশু দ্বারা করা নাজায়েজ। ইসকামে কোরবানির পশু নির্বাচন করার জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম। এই সব নিয়ম অনুযায়ী কোরবানির পশু নির্বাচন করে কোরবানি দিতে হয়। কোরবানির জন্য পশু হতে হবে দোষত্রুটিমুক্ত। কোরবানির পশু নিখুঁত, দোষমুক্ত ও সুন্দর হওয়া আবশ্যক।

হাদিসে এসেছে, তোমরা কোরবানির পশু শক্তিশালী ও মোটাতাজা দেখে নির্বাচন কর। কারণ, এগুলো পুলসিরাতের ওপর তোমাদের বাহন হবে। মুসনাদুল ফিরদাউস

কোরবানির পশু নির্বাচন করার নিয়ম পশুর বয়স বৈশিষ্ট্য কোরবানির জন্য উত্তম পশু

কোরবানির পশু

কোরবানির জন্য আপনাকে মানুষের গৃহপালিত পশু নির্বাচন করতে হবে। কোরবানির জন্য পশু যেমন, উট, গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল ও দুম্বা ইত্যাদি দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ রয়েছে। বন্য পশু যেমন, হরিণ, বন্য গরু ইত্যাদি দিয়ে কোরবানি করা বৈধ নয়।

যেসব পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ সেই সকল পশুর নর ও মাদা দিয়ে কোরবানি করা বৈধ। অতএব কোরবানির পশু নর ও মাদা উভয়ই দিয়ে কোরবানি করা যাবে।

কোরবানির জন্য পশুর বয়স

কোরবানির জন্য পশুর নির্দিষ্ট বয়স হতে হবে তা ছাড়া কোরবানি বৈধ হবে না। তাই কোরবানির সময় পশু নির্বাচনে পশুর বয়স জানা খুবই জরুরী।

উট : কোরবানির জন্য উটের বয়স কমপক্ষে ৫ বছর হতে হবে। উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে।

গরু ও মহিষ : কোরবানির জন্য গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে।

ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা : কোরবানির জন্য ছাগল, ভেডা ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে।

তবে কোরবানির জন্য ভেড়া ও দুম্বা ১ বছরের কিছু কম হলেও চলবে কিন্তু দেখতে মোটাতাজা হতে হবে। ভেডা ও দুম্বা দেখতে যেন ১ বছরের মতো মনে হয়। এইরকম পশু হলে কুরবানি করা বৈধ। তবে কোরবানির ভেড়া বা দুম্বা ৬ মাসের কম হলে কোরবানি হবে না। আর কোরবানির জন্য ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানি বৈধ নয়।’ (বাদায়েউস সানাঈ)

কোরবানির জন্য উত্তম পশু

অনেক প্রশ্ন করে থাকেন কোরবানির জন্য উত্তম পশু কি? কোন পশু দিয়ে কোরবানি করা সবচেয়ে ভালো। হাদিসে বর্ণিত, যেসব পশু দিয়ে কুরবানি করা যায়, সেসব পশুর মধ্যে হৃষ্টপুষ্ট এবং দেখতেও সুন্দর তা দিয়ে কুরবানি করা উত্তম। (মুসনাদে আহমাদ, বাদায়েউস সানাঈ)

মোট কথা কোরবানির পশু বড় ধরনের দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হবে। যেমন হাদিসে এসেছে, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্ধ – যার অন্ধত্ব স্পষ্ট, রোগাক্রান্ত – যার রোগ স্পষ্ট, পঙ্গু – যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট ও আহত – যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৪৪)

কোরবানির পশু নির্বাচন করার নিয়ম

কোরবানির পশু কেনার সময় বা নির্বাচনের জন্য অনেক কিছু লক্ষ করতে হয়। কোরবানির জন্য প্রয়োজন নিখুঁত দোষত্রুটিহীন পশু। গৃহপালিত উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা জায়েয। এ পশুগুলোর মধ্যে এমন কিছু খুঁত বা সমস্যা রয়েছে যে কারণে তা দিয়ে কোরবানি বৈধ হবে না। তাই যে সব বৈশিষ্ট্যের পশু দ্বারা কোরবানি বৈধ হবে না তা নিচে উল্লেখ করা হল-

১। যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন খুত থাকা পশু দ্বারা কোরবানি বৈধ নয়। (তিরমিজি, আবু দাউদ)

২। এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না। তা দ্বারাও কোরবানি করা বৈধ নয়। (তিরমিজি, বাদায়েউস সানাঈ)

-Advertisements-

৩। যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না, এমন পশু দ্বারাও কোরবানি করা বৈধ নয়।(বাদায়েউস সানাঈ)

৪। যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশু দ্বারা কোরবানি বৈধ নয়। (তবে যে পশুর অর্ধেক শিং, শিং ফেটে, ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু দিয়ে কোরবানি করা বৈধ। (তিরমিজি, আবু দাউদ, রদ্দুল মুহতার, বাদায়েউস সানাঈ)

৫। যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশু দ্বারাও কোরবানি বৈধ নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তা দ্বারা কোরবানি বৈধ। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ)

৬। যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু দ্বারাও কোরবানি বৈধ নয়। (তিরমিজি, বাদায়েউস সানাঈ)

কোরবানির পশু কেনার সময় বা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো ভালোভাবে লক্ষ রাখতে হবে অন্যথায় কোরবানি বৈধ হবে না। আপনার কোরবানির পশু হতে হবে সুন্দর, মোটাতাজা ও হৃষ্টপুষ্ট। এই সকল ত্রুটিবিহীন পশু দ্বারা কোরবানি করলে আপনার কোরবানি বৈধ হবে।

কোরবানির পশু কেনার সময় বা নির্বাচন করার সময় এই সকল বিষয় দেখে শুনে নির্বাচন করতে হবে।

কোরবানির পশুর যেসব ত্রুটি থাকলেও কোরবানি দেওয়া যাবে

পশু কোরবানির জন্য সবচেয়ে উত্তম পশু হল ত্রুটিহীন পশু। কিছু কিছু পশুর সামান্য ত্রুটি রয়েছে তবে সেই সব ত্রুটি থাকলেও কোরবানি বৈধ হবে। কোরবানির পশুর যেসব ত্রুটি থাকলেও কোরবানি দেওয়া যাবে সেগুলো হল-

১। কোরবানির পশুর পশু পাগল, তবে ঘাস-পানি ঠিকমতো খায়,

২। কোরবানির পশুর লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা, তবে বেশির ভাগ অংশই আছে

৩। কোরবানির পশুর জন্মগতভাবে শিং নেই,

৪। কোরবানির পশুর শিং আছে, তবে ভাঙা,

৫। কোরবানির পশুর কান আছে, তবে ছোট,

৬। কোরবানির পশুর একটি পা ভাঙা, তবে তিন পা দিয়ে সে চলতে পারে,

৭। কোরবানির পশুর পশুর গায়ে চর্মরোগ,

৮। কোরবানির পশুর কিছু দাঁত নেই, তবে বেশির ভাগ আছে। স্বভাবগত এক অণ্ডকোষবিশিষ্ট পশু,

৯। কোরবানির পশুর পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম,

১০। কোরবানির পশুর পুরুষাঙ্গ কেটে যাওয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম।

এই সব ত্রুটি থাকলেও পশু কোরবানি দেওয়া যাবে। তবে কোরবানির পশু নির্বাচন এ উত্তম হচ্ছে ত্রুটিমুক্ত পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া, ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি দেওয়া অনুচিত।

কোরবানির জন্য পশু নির্বাচনের জন্য এই সকল বিষয় দেখে শুনে কোরবানির পশু নির্বাচন করা। কোরবানির পশুর বৈশিষ্ট্য হবে সর্বোত্তম। উপরের কোন বৈশিষ্ট্য থাকলে সেই পশু দিয়ে কোরবানি না দেওয়াই ভাল। কোরবানির পশু হবে ত্রুটিমুক্ত, মোটা তাজা , সুন্দর ও হৃষ্টপুষ্ট।

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের কোরবানির জন্য সুন্দর পশু নির্বাচন করার এবং সকলকে পশু কোরবানি করার তৌফিক দান করুন। আমিন। ধন্যবাদ

Advertisements

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More