যাদের আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন জাহান্নামের জন্য

কিছু মানুষ আছে যাদেরকে আল্লাহ্‌ তালা সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র জাহান্নামের জন্যই

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। সুপ্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিনের অশেষ মেহেরবানী ও দয়ায় ভালো আছেন। আজ আমি এমন কিছু কপাল পোড়া মানুষের কথা আপনাদের বলবো, যাদের কথা হয়তোবা এর আগে আপনারা কখনো শোনেন নি।

আল্লাহ্‌র একটা আজাবের পরে আরেক টি আজাব আসার পরেও যদি আমাদের ভিতরে কোন প্রকার পরিবর্তন না আসে, আমাদের যদি চেতনা না জাগে, আমাদের ভিতরে যদি ভয় না আসে, তাহলে আজ আপনাদের একটা বার্তা দিতে চাই। বার্তা টি হলো, পবিত্র কোরআন এ বলা আছে, কিছু মানুষ আছে যাদেরকে আল্লাহ্‌ তালা সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র জাহান্নামের জন্যই। নাউযুবিল্লাহ্‌।

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, একবার ভেবে দেখুন কত বড় ভয়াবহ কথা। একটু চিন্তা করে দেখুন সবাই। যার জন্মই হয়েছে  জাহান্নামের আগুনে পোড়ানোর জন্য, তার জান্নাতে যাওয়ার কোন পথ নেই। এই ব্যাক্তিদের থেকে হতভাগা আর কে হতে পারে বলেন তো? কিন্তু তারা আসলে কারা?

তাদের চিহ্ন আল্লাহ্‌ তালা নিজেই বলে দিয়েছেন। সেই লোক গুলোকে জাহান্নামের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যাদের জাহান্নামে যাওয়া হবে অবধারিত, যাদের জন্মই হয়েছে কেবল জাহান্নামের জন্য, তাদের আল্লাহ কেবল সৃষ্টিই করেছেন জাহান্নামের জন্য। তাদের চিহ্ন কি? তাদের তিন টি চিহ্ন রয়েছে।

জাহান্নামীদের চিহ্ন

-Advertisements-

১। তাদেরকে আল্লাহ্‌ তালা অন্তর দিয়েছেন, কিন্তু সেটা দিয়ে তারা অনুভব করে না। তাদের কোন উপ্লব্ধি নেই। তারা শেখার চেষ্টাও করে না। এবং এই লোক গুলোর অন্তরে আল্লাহ্‌ তালা সিল মোহরও মেরে দিয়েছেন। দ্বীনি কথা, হেদায়েতের কথা, ইসলামের কথা, ওয়াজ মাহ্‌ফিল যাদের অন্তরে কোন দিন প্রবেশ করবে না। তারা শুনে না, শুনতে চায় না অথবা শোনার ভান করে, বুঝেও না বোঝার ভান করে। কোন কথাও তাদের ধরে না। তাদের চেনার এটা এক টি লক্ষণ। এটা একটি চিহ্ন যে, আপনাকে মহা রোগে ধরেছে। যদি কখনো এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে যান, তাহলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কেননা আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন এ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের জাহান্নামের জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। নিশ্চিত ভাবে জেনে রাখুন, এই রোগ টি জাহান্নামে ধরা রোগ। যাদের অন্তরে মরিচা পড়ে গিয়েছে তাদের মূলত জাহান্নামের রোগ ধরেছে। যাদেরকে হাজার হেদায়েতের কথা বলেও কোন কাজ হয় না, অন্তর টা একেবারে শক্ত হয়ে গেছে। একজন মানুষ ইন্তেকাল করলো, কিন্তু তার মনে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তাকেও যে একদিন মরতে হবে, এ রকম মরা খাটিয়ায় যে তাকেও একদিন শুতে হবে, সে খাটিয়ার পাশে দাঁড়িয়েও এই বিষয় টি ভাবছে না। তার অন্তরে এতটাই জং ধরেছে।

এই জাতীয় অন্তর যদি আপনার হয়ে থাকে, আপনার অন্তর কিন্তু গলবে না। আমাদের ভিতরে যদি এই চরিত্র বা চিহ্ন থাকে যে, আমরা সব শুনবো কিন্তু আমাদের কোন পরিবর্তন হবে না। তাহলে এর মানে হলো, আমরা এই এই আয়াতের লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হচ্ছি। যে আমার জন্ম হয়েছে কেবল জাহান্নামের জন্য। এই বিষয়ে ব্যাপক আশঙ্কা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে, যদি আপনার মধ্যেও এই রকম লক্ষণ প্রকাশিত হয়ে থাকে। আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে যাদের কিছু বললে এ কান দিয়ে শোনে এবং অপর কান দিয়ে বের করে দেয়। এত ওয়াজ, এত নসিহত, এতো আয়াত, এত কিছু বোঝে শুনে এবং জানে। কিন্তু তার পরেও না জানার ভান করে থাকে। উদাসীনতা তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। মানুষের সামনে লাশের পর লাশ পরে আছে। অপরদিকে করোনা শেষ না হতেই বন্যা এসে হাজির হয়েছে। সারা দেশ বন্যার মহা প্লাবনে প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ নিজ গৃহে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভেতরে বন্যা আর বাইরে করোনা, তাহলে তারা যাবে কোথায়? কিন্তু তারপরও এসব কারো চোখে পরে না। মানুষ হেদায়েতের পথে আসছে না।

দীর্ঘ মেয়াদী সর্ব গ্রাসী, আবার কোন কোন বিজ্ঞানী তো বলেই দিয়েছেন যে, পৃথীবি আর আগের যায়গায় ফিরে যাবে না, আর আগের পরিবেশ ফিরে পাবে না। পৃথিবী তার পরীণতির দিকে আগাচ্ছে। আর এর পরেই কেয়ামত আসছে। আল্লাহু আকবর। আস্তে আস্তে পুরো পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে। করোনার এই ভয়াবহতা এই পেন্ডামিকে এটা স্পষ্টভাবে নির্দেষ দিচ্ছে যে, এই পৃথিবী তার পরিণতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই রকম ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে এসেও যদি আমরা আল্লাহর দিকে রুজু না হই, তওবা না করি, চোখের পানি না ফেলি, সংশোধন না করি, তাহলে আল্লাহ্‌ তালার কাছে আমরা কি নিয়ে দাঁড়াবো? আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সংশোধিত হওয়ার তাওফিক দান করুক।

২। যাদের সৃষ্টি হয়েছে কেবল জাহান্নামের জন্য, তাদের দ্বিতীয় চিহ্ন হচ্ছে, তাদের কান আছে কিন্তু তারা কানে শোনে না। অথবা তারা শোনে কিন্তু তা গ্রহণ করে না। তাদের চোখ আছে, চোখ দিয়ে দেখে আল্লাহ্‌র কুদরত, চোখ দিয়ে দেখে আল্লাহ্‌র পাকড়াও, আজাব, গজব সব দেখে। তারা দেখে জালেমদের পরিণতি, হারাম খোরদের পরিণতি, কিন্তু তারা এত কিছু দেখার পরেও কোন শিক্ষা গ্রহণ করে না। তাদের অন্তর এত শক্ত হয়ে গেছে যে, যে পর্যন্ত না তাকে আঘাত করা হচ্ছে তার আগ পর্যন্ত কোন কিছু দেখে তার কিছুতেই কিছু যায় আসে না। এদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন বলেছে “খাতামাল্লাহু আলা কুলুবিহিম, ওয়ালা সাময়িহিম, ওয়ালা আবসারিম, গিশাওয়াহ”। তাদের অন্তরে আল্লাহ্‌ মোহর মেরে দিয়েছেন। যার কারণে তারা চোখ থাকতেও কানা, মুখ থাকতেও বোবা। তাদের অন্তর শক্ত করে দিয়েছেন আল্লাহ্‌। অতিমাত্রায় গুনাহ্‌ এর উপর অবিচল থাকার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। এ জাতীয় লোকদের কোন হিতাহিত জ্ঞান নেই। তাদের কোন পরিবর্তন আসে না।

আল্লাহ বলেছেন এমন মানুষ গুলো হলো “বালহুম আদল বা চতুষ্পদ জন্তু” এর মত। চতুষ্পদ জন্তু যেমন কিছু দেখেও বুঝে না, কিছু শুনেও শুনে না এবং উপলব্ধি করার ক্ষমতাও নেই ঠিক তেমন। এই লোকগুলো বাহ্যিক অবয়বে যদিও মান এবং হুশ সম্পন্ন মানুষ বলা যেতে পারে, কিন্তু কার্যত তারা আসলে চতুষ্পদ পা ওয়ালা জন্তু হয়ে গিয়েছে। এত পথ হারা বা পথ ভ্রষ্ট মানুষ যাদের কানে কোন ভালো মন্দ কথা ঢোকে না। অথবা এদের চাইতেও বেশি পথ হারা হচ্ছে তারা, যারা শুনতেও চায় না এবং সরাসরি এর বিরুদ্ধাচারণ করে। আল্লাহ্‌ তালা আমাদের সবাইকে সেই হতভাগা মানুষদের কাতার থেকে মুক্ত হওয়ার তৌফিক দান করুক।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, হয়তো আপনারা ভাবছেন যে, এমন কিছু লক্ষণ তো আমার মধ্যে আসছে। আর আমি তার পরিবর্তন চাই। আমি চাই আমার অন্তর আত্মা রাব্বুল আলামিনের দিকে ফিরিয়ে নিতে। আমি চাই আমার প্রভুকে খুশি করতে। আমি আমার কল্বে দ্বীন প্রবেশ করাতে চাই। তাহলে প্রিয় ভাই ও বোনেরা, প্রতি নামাজের শেষে আজ থেকে দোয়া করতে থাকুন “ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব, সাব্বিত কালবি আলা দ্বীনিকা”। অর্থঃ হে কলব পরিবর্তনকারো মালিক, হে কলবের মালিক, আমার অন্তরকে দ্বীনের প্রতি অবচল করে দিন। আমিন।

Advertisements

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More