জান্নাত অর্থ কি ? জান্নাতের স্তর বা নাম এর সম্পূর্ণ বিররণ

কুরআন হাদিসের আলোকে জান্নাত অর্থ কি এবং জান্নাতের বিবরণ আলোচনা

আসসালামু আলাইকুম পাঠক বৃন্দরা। আপনারা সবাই কেমন আছেন ? আশা করি আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে ভালই আছেন। আজকে আমরা আলোচনা করবো জান্নাত নিয়ে। জান্নাত কি ? জান্নাত অর্থ কি ? জান্নাতের নাম , জান্নাতের স্তর কয়টি ? আরো আমরা জান্নাতের বর্ণনা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। চলুন কথা না বাড়িয়ে আজকের আলোচ্য বিষয় জান্নাতের বিবরণ শুরু করা যাক-

জান্নাত অর্থ ও জান্নাতের বর্ণনা ?

জান্নাত শব্দটি একটি আরবি শব্দ। জান্নাতের শাব্দিক অর্থ হল বাগান, উদ্যান, আবৃৃত স্থান। ফার্সি ভাষায় জান্নাতকে বলা হয় বেহেশত। একে বাংলা ভাষায় বলা হয় স্বর্গ। ইসলামি পরিভাষায়, জান্নাত অর্থ আখিরাতে ঈমানদার ও নেককার বান্দাদের জন্য যে চির স্থায়ী শান্তির আবাস স্থল তৈরি করে রাখা হয়েছে, তাকে জান্নাত বলে। পবিত্র আল কুরআনে আটটি জান্নাতের নাম উল্লেখ রয়েছে।

জান্নাত অর্থ কি ? জান্নাতের স্তর বা নাম এর সম্পূর্ণ বিররণ

জান্নাত

চির সুখ শান্তির জায়গা হল জান্নাত। জান্নাতের মধ্যে সব কিছুই সুন্দর ও আকর্ষণীয় ভাবে সজ্জিত থাকবে। সমস্ত আসবাব পত্র, আসন মনি-মুক্তা সোনা দানা দিয়ে নির্মিত থাকবে। জান্নাত সমস্ত রকমের নিয়ামত দ্বারা পরিপূর্ণ থাকবে। সেখানে থাকবে রেশমের গালিচা, দুধ ও মধুর নহর। জান্নাতের মধ্যে আনন্দ উপভোগ করার সব রকম উপকরণ থাকবে। জান্নাত সম্পর্কে বিবরণে আল্লাহ তায়ালা বলেন, সেখানে (জান্নাত) তোমাদের মন যা চাইবে তা-ই তোমাদের জন্য রয়েছে আর তোমরা যা কিছু দাবি করবে তাও তোমাদের দেওয়া হবে। (সুরা হামিম আস-সাজদা-৩১)

জান্নাতের বর্ণনা দিয়ে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সব বস্তু তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো (মানুষের) চোখ কোনোদিন দেখেনি, কোনো (মানুষের) কান কোনোদিন শোনেনি, আর মানুষের অন্তরও যা কোনো দিন কল্পনা করতে পারে নি। (মিশকাহ্)

আল কুরআনে বর্ণিত জান্নাতের নাম সমূহ বর্ণনা করা হলঃ

জান্নাতের সংখ্যা মোট আটটি। নিম্নে আল কুরআনের বর্ণিত জান্নাতের নাম / স্তর দেয়া হল-

১। জান্নাতুল ফিরদাউস – জান্নাতের সর্বোচ্চ বাগান
২। দারুল মাকাম – বাড়ি
৩। দারুল কারার – আখেরাতের আলয়
৪। দারুস সালাম – শান্তির নীড়
৫। জান্নাতুল মাওয়া – বসবাসের জান্নাত
৬। দারুন নাঈম – নেয়ামত পূর্ণ কানন/বাগান
৭। দারুল খুলদ – চিরস্থায়ী বাগান
৮। জান্নাতুল আদন – অনন্ত সুখের বাগান

জান্নাতুল ফিরদাউস এর বর্ণনা

জান্নাতুল ফিরদাউস জান্নাতের নাম বা স্তরের অর্থ জান্নাতের সর্বোচ্চ বাগান। হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) জান্নাতের বিবরণ দিতে বলেন, জান্নাতের মধ্যে রয়েছে শত স্তর । প্রত্যেক জান্নাতের স্তর এর মাঝের দূরত্ব হলো আকাশ ও মাটির দূরত্বের সমান। আর জান্নাতুল ফেরদাউস তার মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছ। আর সেখান থেকেই জান্নাতের চারটি ঝর্ণা ধারা প্রবহমান। এর উপরে রয়েছে আরশে আজীম। তোমরা আল্লাহ্‌র নিকট জান্নাত লাভের জন্য দোয়া করলে জান্নাতুল ফেরদাউসের জন্য দোয়া করবে। তিরমিজি – কিতাবুল জান্নাহ

হযরত আমর ইবনে সালামা (রা) বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা জান্নাতুল ফিরদাউস নিজ হাতে খাঁটি সোনার ইট এবং অত্যন্ত সুগন্ধিময় মিশকের ইট দ্বারা নির্মাণ করেছেন। এতে শ্রেষ্ঠ জাতের ফলফলাদির বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। অতঃপর আমার আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন হয়ে তার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেছেন, ‘আমার বড়ত্বের কছম, ইহাতে মদ পানকারী এবং ব্যভিচারী কখনো প্রবেশ করবে না।’ (সিফাতুল জান্নাত)

দারুল কারার জান্নাতের বিবরণ

দারুল কারার জান্নাতের নাম বা স্তরের অর্থ আখেরাতের আলয় বা স্থায়ীগৃহ। এ জান্নাতের বিবরন এ মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আমার সমপ্রদায়! এ পার্থিব জীবনতো অস্থায়ী উপভোগের বস্তু। আর নিশ্চয় পরকাল হচ্ছে (দারুল কারার) চিরস্থায়ী আবাস। সুরা মুমিন, আয়াত- ৩৯

দারুল মাকাম জান্নাতের বিবরণ

দারুল মাকাম জান্নাতের অর্থ হল বাড়ি।  মহান আল্লাহ তাআলা সুরা ফাতির এর মধ্যে দারুল মাকাম জান্নাতের বিবরণ সম্পর্কে বলেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান, জান্নাতীরা বলবে, মহান আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য শুকরিয়া যিনি আমাদের থেকে চিন্তা দূরীভূত করেছেন। নিঃসন্দেহে আমাদের মালিক অত্যন্ত মেহেরবান যিনি আমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে সবসময় বসবাসের জায়গা করে দিলেন। এখানে নেই কোন কষ্ট, নেই কোন নিরর্থক আলোচনা। (ফাতির ৩৪-৩৫)

দারুস সালাম জান্নাতের বয়ান

দারুস সালাম’ মানে শান্তিনিকেতন। এ জান্নাত সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ, তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য রয়েছে শান্তির আলয় এবং তারা যা করত, তার কারণে তিনি হবেন তাদের অভিভাবক। (আনআমঃ ১২৭)।অর্থাৎ, আল্লাহ (মানুষ)-কে শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন। (ইউনুসঃ ২৫)।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মুমিনদের জন্য তাদের প্রভুর নিকট রয়েছে দারুসসালাম। (আনয়াম ১২৭)
এই জান্নাত সর্বপ্রকার অপছন্দনীয় কাজ থেকে মুক্ত থাকবে। এই জান্নাতের বাসিন্দারা পরস্পরের মধ্যে হাদিয়া পেশ করবে।

-Advertisements-

জান্নাতুল মাওয়া জান্নাতের কিছু কথাঃ

আরবীতে মাওয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে ঠিকানা অর্থাৎ বসবাসের জায়গা। হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, ইহা সেই জান্নাত যেখানে হযরত জিব্রাইল (আঃ) ও হযরত মিকাইল (আঃ) এসে থেমে যান। হযরত মুকাতিল বলেন, এ জান্নাতে শহীদদের আত্মা বসবাস করে। এগুলোর মধ্যে শহীদদের আত্মা ঘোরাফেরা করে। আল্লাহ তাআলা সুরা আন-নাজমা এর মধ্যে জান্নাতুল মাওয়ার উল্লেখ করেছেন।  এই জান্নাত সম্বন্ধে মহান আল্লাহ বলেন,

অর্থাৎ, যারা বিশ্বাস করে সৎকাজ করে তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ তাদের আপ্যায়নের জন্য জান্নাত হবে তাদের বাসস্থান। (সাজদাহঃ ১৯)

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুনতাহার নিকট। যার নিকট অবস্থিত (জান্নাতুল মাওয়া) বাসােদ্যান। (নামঃ ১৩-১৫)

দারুন নাঈম জান্নাতের বিবরণ

দারুন নাঈম জান্নাতের নাম এর মানে সম্পদশালী, সুখময়। এ জান্নাতের বিবরণ এ মহান আল্লাহ বলেন,অর্থাৎ, নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস করেছে এবং ভাল কাজ করেছে তাদের প্রতিপালক তাদের বিশ্বাসের কারণে তাদেরকে পথ প্রদর্শন করবেন, শান্তির উদ্যানসমূহে তাদের (বাসস্থানের) তলদেশ দিয়ে নদীমালা প্রবাহিত থাকবে। (ইউনুসঃ ৯)

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতুন নাঈম। (লোকমান-৮ )

দারুল খুলুদ জান্নাতের নাম বর্ণনা

দারুল খুলুদ জান্নাতের অর্থ হল চিরস্থায়ী বাগান। সূরা আল-ফুরকান এর মধ্যে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿أُوْلَٰٓئِكَ يُجۡزَوۡنَ ٱلۡغُرۡفَةَ بِمَا صَبَرُواْ وَيُلَقَّوۡنَ فِيهَا تَحِيَّةٗ وَسَلَٰمًا ٧٥  [الفرقان٧٤]

তারাইযাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষযেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। আর তারা প্রাপ্ত হবে সেখানে অভিবাদন ও সালাম।”(সূরা আল-ফুরকান: ৭৫)

মহান আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٞ مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠  [الزمر٢٠]

তবে যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করেতাদের জন্য আছে বহু প্রাসাদ যার উপর নির্মিত আরো প্রাসাদযার পাদদেশে নদী প্রবাহিতএটা আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতিআল্লাহ্ প্রতিশ্রুতির বিপরীত করেন না।”(সূরা যুমার: ২০)

জান্নাতুল আদন সম্পর্কে আলোচনাঃ

জান্নাতের স্তর বা নাম এর মধ্যে সর্বশেষ স্তর জান্নাতুল আদন। জান্নাতুল আদন অর্থ হল অনন্ত সুখের বাগান। কুরআনে জান্নাতুল আদন এর সম্পর্কে উল্লেখ করেছে,

جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَذَٰلِكَ جَزَاءُ مَن تَزَكَّىٰ

বাংলা অর্থ – আদন বাগান যার পাশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে। আর এটা পাবে ঐ ব্যক্তিগণ যারা নিজেকে পবিত্র রাখে। ( সূরা ত্বহা আয়াত : ৭৬)। এই সেই স্থান যেখানে মহান আল্লাহ পাক আদম এবং হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন।

এছাড়া জান্নাতের নাম ও স্তরের বিররন মহান আল্লাহ তাআলা আল কুরআনের অনেক জায়গায় দিয়েছেন। অর্থাৎ যারা মুমিন হয়ে জীবন যাপন করবে। আল্লাহর ভয় অন্তরে পোষন করে ইবাদত বন্দেগী করবে তাদের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এই জান্নাত উপহার স্বরূপ।

মহান আল্লাহ আমাদের জান্নাতের নিয়ামতের কথা অন্তরে পোষণ করে সঠিক ও সুন্দর পথে চলার তৌফিক দান করুন। আর আমাদের সবাইকে জান্নত দান করুন। আমিন

আপনি আরো পড়তে পারেন, স্বামী স্ত্রী জান্নাতে যাবেন যে আমলের মাধ্যমে।

Advertisements

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More