কোরবানির ফজিলত ও কোরবানির ঈদের আমল সমূহ

কোরবানির ফজিলত ও আমল

ঈদুল আযহার অর্থই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি। কোরবানি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়ে থাকে। কোরবানির ফজিলত অনেক বেশি। কোরবানির দিনে পশু কোরবানি সহ কিছু আমল আছে যা পালন করতে হয়। কোরবানির ঈদের আমল গুলোর ফজিলত অনেক বেশি। আজকে আমরা আলোচনা করবো কোরবানির ফজিলত ও আমল সম্পর্কে। চলুন জেনে নেয়া যাক-

কোরবানির ফজিলত

কোরবানি নামাজের মতো স্বতন্ত্র ইবাদত। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে কোরবানির ফজিলত ও সাওয়াব অনেক বেশি। আর এটা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাত হওয়ার কারণেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তা পালন করেছেন। সে কারণে তা উম্মতে মুহাম্মাদির সামর্থ্যবানদের জন্যও আদায় করা আবশ্যক।

আল্লাহর মহব্বতে নিবেদিত ইব্রাহিম (আ) বৃদ্ধ বয়সে প্রাপ্ত তাঁর আদরের সন্তান হজরত ইসমাঈলকে জবাই করার পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন, যা ছিল এক কথায় যেমন মর্মস্পর্শী তেমনি ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে পিতা ও পুত্রের ত্যাগের এক মহান দৃষ্টান্ত।

তাঁর সেই অমর সুন্নতের অনুসরণে, প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে সামর্থ্যবান মুসলমানেরা প্রতীকী পশু জবাই করে থাকেন। এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সাধনা করে থাকেন।

জিলহজ মাসের এ দিন কোরবানির পশু জবাই করার পর্বের আগেই দুই রাকাত সালাত আদায় করা হয়। একেই বলা হয় ঈদুল আজহা। কোরবানির দিনের ফজিলত সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। অথচ কিছু আলেমের মতে, এ দিনটি বছরের সর্বোত্তম দিন।

এমনকি তাদের দৃষ্টিতে আরাফাতের দিনের চেয়েও এ দিনটি উত্তম। ইমাম ইবনুল কায়্যিম বলেন, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন হলো ইয়াওমুন নাহর বা কোরবানির দিন। এটাই হলো হজ আকবারের দিন। আবু দাউদ বর্ণিত একটি হাদিসে রয়েছে যে, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন হলো কোরবানির দিন; অতঃপর স্থিতিশীলতার দিন।

কোরবানির দিন জিলহজ মাসের ১০ তারিখ আর স্থিতিশীলতার দিন হলো ১১ তারিখ। এ দিনে মোটামুটি সবাই মিনায় স্থিতিশীলতার সাথে অবস্থান করেন।

কোরবানির ঈদের দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল

পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবানির দিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে। যা প্রত্যেক মুসলমানের পালন করা উচিৎ। কোরবানির ঈদের দিনের আমল গুলো হল-

গোসল ও পবিত্রতা অর্জন করা

ঈদের নামাজের জন্য গোসল করা ও মিসওয়াক করা সুন্নাত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, হযরত মুহাম্মদ (সা) ঈদুল ফিতর ও আযহার দিন গোসল করতেন। (বুখারি, হাদিস : ১/১৩০)

উত্তম পোষাক পরিধান করা

মুসলমানদের দুই ধর্মীয় উৎসব অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা বা কোরবানির দিন সাধ্যের মধ্যে সব চেয়ে উত্তম পোষাক পরিধান করা। ঈদের দনে সুন্দর ও উত্তম পোষাক পড়া সুন্নত। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহিমাল্লাহ বলেন, মুহাম্মদ (সা) দুই ঈদের দিন সবচেয়ে সুন্দর ও উত্তম জামাটি পরিধান করতেন। তার একটা বিশেষ পোষাক ছিলো, যা তিনি দুই ঈদে ও জুমাতে পরিধান করতেন।

হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, জাফর ইবনু মুহাম্মদ তার পিতা থেকে, তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সা) প্রতিটি ঈদে ডোরা কাটা পোষাক পরিধান করতেন। (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৬৩৬৩)

সালাত আদায় করা

ঈদের দিনের আর একটি আমল হল ঈদের সালাত আদায় করা । ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব। তাই আমরা ঈদের সালাত আদায় করার জন্য ঈদ্গাহে জামায়াতে অংশগ্রহন করবো।

মসজিদের বাইরে উন্মুক্ত ময়দানে ঈদের জামায়াত করা সুন্নত। তাই বিভিন্ন মসজিদের পরিচালক মিলিত হয়ে ঈদগাহ বা খোলা ময়দানে ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করে একটি সুন্নতের ওপর আমল করার পরিবেশ তৈরি করবেন।

-Advertisements-

ঈদ্গাহে পানাহার ব্যতীত যাওয়া

ঈদুল আযহার দিন অর্থাৎ কোরবানির আর একটি আমল হল ঈদগাহে না খেয়ে যাওয়া। নামাজের পর নিজের কোরবানির গোসত দিয়ে প্রথম খাবার গ্রহন করা সুন্নত।

হাদিস শরিফে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা) ঈদুল ফিতরের দিন কোনো কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না। আর ঈদুল আযহার দিন নামাজ না পড়ে কিছু খেতেন না। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৫৪২)

তাকবির পাঠ করা । কোরবানির ঈদের আমল

ঈদুল আযহা অর্থাৎ কুরবানির ঈদের অন্যতম আমল হল তাকবির পাঠ করা। কোরবানির ঈদে ঈদগাহে জাওয়ার সময় উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করা সুন্নত। তাকবির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে বেশি বেশি স্মরণ করা সুন্নত। পুরুষেরা এ তাকবির উঁচু আওয়াজে পাঠ করবে, মেয়েরা নীরবে। এ তাকবির জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঠ করবে। (ফাতহুল বারি : ২/৫৮৯)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যাতে তোমরা গণনা পূরণ করো এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুণ আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া

পায়ে হেটে ঈদগাহে যাওয়া ঈদের একটি আমল। কোন ধরণের অপারগতা না থাকলে পায়ে হেটে ঈদ্গাহে যাওয়া সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ (সা) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করতেন এবং পায়ে হেঁটে ঈদগাহ থেকে প্রত্যাগমন করতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৯৫)

ঈদগাহে যাওয়া আসার রাস্তা পরিবর্তন করা

ঈদের নামাজ পড়ার জন্য ঈদ্গাহে যেতে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া আর আসার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে আসা রাসুল (সা) এর সুন্নত। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.) ঈদের দিন ঈদগাহে আসা যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৮৬)

ঈদুল আযহার আমল কোরবানি করা

ঈদুল আযহার দিনের সবচেয়ে বড় আমল হল কোরবানির পশু জবাই করা। কোরবানির এই আমলটির জন্য রয়েছে কয়েকটি বিধান। পশু কোরবানি করতে হবে ঈদুল আযহার নামাজ শেষে। এর আগে কোরবানির পশু জবাই করলে কোরবানি হবে না।

হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, এ দিনের সর্বপ্রথম যে কাজটি আমরা করব তা হলো আমরা (ঈদের) সালাত আদায় করব; এরপর আমরা ফিরে এসে কোরবানির পশু জবাই করব। যে এভাবে করবে সে আমাদের সুন্নতপ্রাপ্ত হলো। আর যে সালাত আদায়ের আগেই জবাই করল তাহলে তা জবাইকৃত প্রাণীর গোশতে পরিণত হলো, যা সে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য ব্যবস্থা করল। (বুখারি – সহি)

নিজের কোরবানির পশু নিজে জবাই করা সুন্নত। ভাগে যারা কোরবানির ক্ষেত্রে অংশীদারের মধ্যে থেকে আগ্রহী যেকোন একজন কোরবানি করা উত্তম। তবে উভয়ের অনুমতিতে অন্যকেউ কোরবানির পশু জবাই করলে কোরবানি হয়ে যাবে।

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়

কোরবানির ঈদের দিন আর একটি আমল হল শুভেচ্ছা বিনিময় করা। ঈদের দিন একে অপরের সাথে দেখা হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। কোরবানির আমল গুলোর মধ্যে পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজখবর নেয়া ও কুশল বিনিময় করা অন্যতম একটি আমল।

জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা) এর সাহাবোয়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিন কুম’ আল্লাহ আমার এবং আপনার যাবতীয় ভাল কাজ কবুল করুক। (ফাতহুল কাদির, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৫১৭)

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কোরবানির ফজিলত বুঝে দুই ঈদের ও কোরবানির দিনের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

প্রিয় পাঠকগণ এই ছিল আজকের আলোচনা কোরবানির ফজিলত ও আমল। কেমন লাগলো আমাদের কোরবানির আমল আলোচনা তা কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ

Advertisements

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More