পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উপকারিতা | নামাজের শারিরিক উপকারিতা

মানুষের দেহ চলমান ইঞ্জিনের মত। দেহের শারীরিক সুস্থতার জন্য মানুষের নড়া-চড়া, হাঁটা-চলা ও ওঠা-বসা করা খুবই দরকার। পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য একজন মুসলমানকে মসজিদে যাতায়াত করতে হয়। নামাজ আদায়ের সময় ওঠা-বসা করতে হয়। এ সবই মানব দেহের জন্য বেশ উপকারী। পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য ৫টি নির্ধারিত সময় সূচি রয়েছে। এছাড়াও সুন্নত ও নফল নামাজের আলাদা সময় রয়েছে। এই পাচঁ ওয়াক্ত সময় যেমন আল্লাহ কে খুশি করার জন্য তেমনি মানব দেহের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানগত উপকারিতা রয়েছে। আজ আমরা আলোচলা করব পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন শুরু করা যাক।

ফজরের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান

ফজরের সময় নামাজ আদায় করলে সারা রাত ঘুমের সওয়াব পাওয়া যায় ও হালকা অনুশীলন হয়ে যায়। এ সময় পাকস্থলী শূন্য থাকে সে জন্য কঠিন অনুশীলন শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এ সময়ে নামাজ আদায় করলে নামাজি ব্যক্তির অচলতা বা অলসতা হতে মুক্তি পায়। মস্তিষ্ক ফ্রি হয়ে যায় আবার চিন্তা করার জন্য মস্তিষ্ক প্রস্তুত হয়ে যায়। এ সময়ে নামাজি ব্যক্তি হাটতে মসজিদে চলে যায় আর আত্মা পরিচ্ছন্ন, প্রশান্ত পরিবেশ থেকে সূক্ষ্ম অনুভূতি লাভ করে- এসবই একজন নামাজি ব্যক্তির জন্য উপকারী। এ সময়ে দেহ ও মন পরিষ্কার থাকে। দাঁত পরিষ্কার, অঙ্গ ধোয়া ও প্রসাব-পায়খানা থেকে পবিত্রতা অর্জন হয়। এতে জীবাণুর আক্রমণ থেকে একজন নামাজি ব্যক্তি বাঁচতে পারে।

জোহরের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান

একজন মানুষ জীবিকার জন্য সারাদিন বিভিন্ন রকমের কাজ করে থাকে। এতে ধুলা, ময়লা, বিষাক্ত কেমিকেল শরীরে লাগে। দেহে জীবাণু আক্রমণ করে। ওজু করলে জীবানু দূর হয়ে এবং ক্লান্তি দূর হয়ে দেহ পুনর্জীবন লাভ করে। আর গরমের দিনে সূর্য ঢলে পড়ার সময় বিষাক্ত গ্যাস হতে থাকে। এ গ্যাস মানবদেহে প্রভাব ফেললে মস্তিষ্ক, পাগলামিসহ বিভিন্ন রকমের রোগ বালাই হতে পারে। এ সময় ওজু করে নামাজ আদায় করলে এ গ্যাস প্রভাব ফেলতে পারে না ফলে দেহ বিভিন্ন রোগ থেকে বেঁচেতে পারে একজন নামাজী ব্যক্তি। এ সময় মহান আল্লাহ তা-আলা নামাজ ফরয করে আমাদের জন্য অনুগ্রহ করেছেন।

আসরের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান:

পৃথিবী দুই ধরনের গতিতে বিদ্যমান। লম্ব আর বৃত্তীয়। যখন সূর্য ঢলতে থাকে পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে থাকে। এমনকি আসরের সময় একদম কমে যায়। এ সময় রাতের অনুভূতি প্রবল হতে পারে। প্রকৃতির মধ্যে স্থবিরতা এবং অবসাদগ্রস্ততা প্রদর্শিত চলতে থাকে। আসরের নামাজের সময় অবচেতন অনুভূতির শুরু হয়ে যায়। এ সময় নামাজ আদায় করলে অতিরিক্ত অবসাদগ্রস্ততা, অবচেতন অনুভূতির আক্রমণ থেকে বাঁচাতে পার্বে একজন নামাজি ব্যক্তি। মানসিক চাপ ও অস্থিরতা কমে যায়। নূরানি রশ্মি নামাজিকে শান্তি দান করে দেয়।

মাগরিবের সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান

মানুষ সারাদিন জীবিকার জন্য শ্রম ও কষ্টের মধ্যে কাটিয়ে দেয়। মাগরিবের সময় ওজু করে নামাজ আদায় করলে আত্মিক ও দৈহিক শান্তি লাভ করা যায়। এ সময় নামাজ আদায়ে পরিবারের বাচ্চারাও অংশ গ্রহণ করতে পারে। এতে বাচ্চারা অনুগত, পুণ্যশীল হয়। এ সময় পরিবারের মধ্যে আনন্দের রেশ বয়ে যায়। আর সেই পরিবারে কোন রকমের অশাকন্তি হতে পারে না। এবং সেই পরিবারে আল্লাহর রহমত বিরাজ করে।

এশার সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান

একজন মানুষ কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে এবং রাতে খাবার খেয়ে থাকে। আর সময় খেয়ে শুয়ে পড়লে বিভিন্ন রোগ হতেও পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অল্প ব্যায়াম করে শুতে গেলে কোনো সমস্যা হবে না। এশার নামাজ ব্যায়ামের চেয়েও বেশি উপকারী। এ নামাজ আদায়ে শান্তি পাওয়া যায়, খাদ্য হজম হয় এবং অস্থিরতা দূর হয়ে যায়। সর্বপুরী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে নাহ ।

তাহাজ্জুদ এর  সময় ও চিকিৎসা বিজ্ঞান

তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা অস্বস্তি, নিদ্রাহীনতা, হার্ট, স্নায়ুর সংকোচন ও বন্ধন এবং মাথার অনেক রকম রোগের চিকিৎসা। যেসব ব্যক্তি দূরের জিনিস দেখে না তারা যদি তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে তারা এসব রোগের উপকার পাবে। এছাড়াও এ সময়ে নামাজ আদায় করলে বুদ্ধি, আনন্দ এবং অসাধারণ শক্তির সৃষ্টি হয় যা নামাজিকে সারাদিন উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে।

-Advertisements-

নামাজের শারীরিক উপকারিতা

একজন মুসলমানের জন্য নামাজ ফরজ ইবাদাত। মহান আল্লাহ তা-আলা প্রতিদিন সব মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে ফরজ করে দিয়েছেন। এই নামাজ পরকালের মুক্তি লাভের অন্যতম কারণ। পরকালে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ নেয়া হবে। যে ব্যক্তি নামাজের হিসাব নিকাস দিতে পারবে, তার পরবর্তী হিসাব নিকাস সহজ হবে।

নামাজ দুনিয়ায় সব রকমের অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, নামাজের মাধ্যমে নামাজি ব্যক্তি অনেক শারীরিক উপকার লাভ করে থাকে। সেই সম্পর্কে শরীরের কিছু উপকার তুলে ধরা হলো-

দাঁড়ানো
একজন মানুষ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন তার চোখ সিজদার স্থানে স্থির থাকে। ফলে মানুষের একাগ্রতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

রুকু
নামাজি ব্যক্তি যখন রুকু করে এবং রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তখন মানুষের কোমর ও হাঁটুর ভারসাম্য রক্ষা হয়। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে কোমর ও হাটু ব্যাথা উপকার হয়।

সিজদা
একজন মানুষ নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন নামাজি ব্যক্তির মস্তিস্কে দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হয়। যার ফলে তার স্মৃতি শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আবার সিজদা থেকে ওঠে যখন দুই সিজদার মাঝখানে বসে এতে তার পায়ের উরু ও হাঁট সংকোচন এবং প্রসার ঘটে। এতে করে মানুষের হাঁটু ও কোমরের ব্যথা উপকার হয়।

ওঠা বসা
নামাজের সময় নামাজি ব্যক্তি যখন দাঁড়ানো। তখন থেকে রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো, এবং সিজদায় যাওয়া, সিজদা থেকে ওঠে স্থিরভাবে বসা, আবার সিজদা দিয়ে দাঁড়ানো ও বসা। এ সবগুলো মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় ব্যায়াম। এতে মানুষের শারীরিক বহুবিদ উপকার হওয়ে থাকে।

মানসিকতার পরিবর্তন
নামাজের মাধ্যমে মানুষের মন ও মানসিকতার পরিবর্তন হয়ে থাকে। গোনাহ, ভয়, নীচুতা, হতাশা, অস্থিরতা, পেরেশানি ইত্যাদি দূর হয়ে যায়। যার ফলে সে বিশুদ্ধ মন নিয়ে সব কাজে করতে সক্ষম হয়।

দেহের কাঠামোগত উন্নতি
নামাজ মানুষের দেহের কাঠামোগত উন্নিতি সাধিত হয়। ফলে স্থুলতা ও বিকলঙ্গতা হার কমে। মানুষ যখন নামাজে নড়াচড়া করে তখন অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে বিশেষ কাজ করে থাকে। অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।

পরিচ্ছন্ন রাখে
একজন নামাজি ব্যক্তির নামাজের জন্য মানুষকে প্রতিদিন পাঁচবার অজু করে থাকে। যার ফলে মানুষের ত্বক পরিষ্কার থাকে। ওজুর করার সময় মানুষের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার হয়। যার দ্বারা বিভিন্ন রকমের জীবানু হতে মানুষ সুরক্ষিত থাকে।

চেহারার লাবন্যতা বৃদ্ধি
মানুষ নামাজের জন্য যতবার অজু করে, ততবারই মানুষের মুখমণ্ডল ধোয়া হয়ে থাকে। যার ফলে মুখমণ্ডলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। মানুষের দেহের বা চেহারার লাবন্যতা বৃদ্ধি পায়, মুখের বলিরেখা ও মুখের দাগ কম হয়।

মহান আল্লাহ তা-আলা মুসলিম ব্যক্তিদের কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শারীরিক, আত্মিক ও মানসিক উপকারিতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উপকারিতা ইহকাল ও পরকালে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আমাদের দিবেন যদি আমরা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমত আদায় করতে পারি। ইনশাল্লাহ আমরা সঠিক সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার চেষ্টা করব ।

কয়েকটি উপদেশ মূলক কথা যা জীবনে চলার পথে আপনি মেনে চলবেন

 

Advertisements

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More