শবে কদর নামাজ কত রাকাত ও নামাজের নিয়ত

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত ও শবে কদরের নিয়ত

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর নামাজ কত রাকাত তার কোন বিশেষ সংখ্যা নেই। তবে আট রাকাত থেকে উপরে যত বেশি পড়া যায় শবে কদরের নামাজ ততই সওয়াব পাওয়া যাবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শবে কদর এ নফল নামাজ ছাড়াও কোরাআন তেলোয়াত, জিকির, কবর জিয়ারত এবং নিজের কৃত গুনার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে রাত কে কাটিয়ে দিতে হবে। তাহলে হয়তো এই তাৎপর্য পূর্ণ রাতে খুজে পাবো আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত। চলুন তাহলে শুরু করা করি আজকের আলচ্য বিষয়, শবে কদর নামাজ কত রাকাত এবং নামাজের নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।

শবে কদর অর্থ কি

শবে কদর ফারসি ভাষা। আরবিতে শবে কদর, ( لیلة القدر‎ ) লাইলাতুল কদর নামে পরিচিত। আর এই লাইলাতুল কদর অর্থ হচ্ছে বরকতময় ও সম্মানিত রাত। এই শবে কদর হাজার মাসের চেয়ে অধিক উত্তম। যা মুসলিম জাতির জন্য একটি নেয়ামত। বরকতময় এই শবে কদর রাত কে আল্লাহ তাআলা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে লুকিয়ে রেখেছেন। বান্দারা যেন এই রাত কে খুজে নিয়ে রজনী কাটিয়ে দেয়। এই শবে কদর ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানেও হতে পারে। শবে কদরের রাত সম্পর্কে আল্লাহ এবং রাসূল (সাঃ) কোন নিদিষ্ট করে দেন নি। আর শবে কদর নামাজ কত রাকাত তাও নিদিষ্ট করে দেন নি।

এ জন্য কেউ কেউ রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে ইতেকাফ করে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর পাওয়ার জন্য কাটিয়ে দেয়। নবী কারীম (সাঃ) আরো বলেছেন, যে মুসলমান শেষ দশ দিনে ইতেকাফ করবে। সে দুই টি ওমরা ও এক টি কবুল হজ্বের সওয়াব পাবে। সুবাহান আল্লাহ। তাই আমরা সকলে চেষ্টা করবো রমজানের শেষ দশ দিনে বিজোড় রাত গুলোতে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর সন্ধান করার।

হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, হে আমার উম্মতরা তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনে লাইলাতুল কদর সন্ধান করো।

এখন আমরা জানবো শবে কদর নামাজ কত রাকাত এবং নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত,

শবে কদর নামাজ কত রাকাত তা পড়ার আগে আমাদের অবশ্যই শবে কদরের নিয়ত সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে,

শবে কদর নামাজের নিয়ত

আমরা জানি, নামাজের নিয়ত চার রাকাত, তিন রাকাত ও দুই রাকাতের হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কোন নামাজের কয় রাকাত নিয়ত করতে হয়। তবে শবে কদর নামাজের নিয়ত দুই রাকাত করতে হয়। নিচে শবে কদর নামাজের নিয়ত দেওয়া হলো।

শবে কদর নামাজের নিয়ত আরবিতে উচ্চারনঃ نَوَايْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّّهِ تَعَالَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ لَيْلَةِ الْقَدْرِِ النَّفْلِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

শবে কদরের নিয়ত বাংলায় উচ্চারনঃ নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা‘আলা- রাক‘আতাই ছালা-তি লাইলাতুল ক্বদরী নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার”।

বাংলায় শবে কদরের নিয়তঃ “আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ্ এর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার”।

এখন আমরা জানবো শবে কদর নামাজ কত রাকাত সে সম্পর্কে,

লাইলাতুল শবে কদর নামাজ কত রাকাত

শবে কদর নামাজ কত রাকাত এর কোন সহিহ হাদিস খুজে পাওয়া যায় নি। তবে নূন্যতম আট রাকাত থেকে শুরু করে উপরে যত বেশি পড়া যায় ততই সওয়াব। শবে কদরের নিয়ত দুই রাকাত করে করে শবে কদরের নামাজ আদায় করতে হয়। সূরা ফাতিহার সাথে যে কোন সূরা মিলিয়ে নামাজ আদায় করলেই হবে। কিন্তু কেউ যদি সূরা ফাতিহার সাথে তেত্রিশ বার (৩৩) সূরা আল ক্বদর এবং তেত্রিশ বার (৩৩) সূরা ইখলাস পাঠ করে, শবে কদরের নামাজ আদায় করে। তাহলে আল্লাহ তাআলা তার আমল নামায় অনেক সওয়াব দান করবেন।

এছাড়াও কদরের রজনীতে আপনি সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজ পড়তে পারেন। উল্লেখিত নামাজ গুলো আপনি কমপক্ষে দু রাকাত করে পড়তে পারেন। কিন্তু শবে কদর নামাজ কত রাকাত এর কোন হিসাব নেই। এছাড়া আপনি রাতের শেষ ভাগে অন্তত আট রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার চেষ্টা করবেন। কেননা, এই নফল নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ। কেউ এই নামাজ পড়ে দোয়া করলে তার দোয়া কবুল হবে।

শবে কদর নামাজ কত রাকাত এ সম্পর্কে কোন তথ্য নেই। নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শবে কদর রাতে চার (৪) রাকাত নামাজ পড়বে এবং উক্ত নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর একুশ (২১) বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে নব্য ভুমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ করে দিবেন ও জান্নাতের মাঝে এক মনোমুগ্ধকর মহল বানিয়ে দিবেন। সুবাহান আল্লাহ।

অপর এক হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শবে কদরের রজনীতে চার (৪) রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ক্বদর ও সূরা ইখলাছ তিনবার করে পাঠ করবে। আর নামাজ শেষে সিজদায় গিয়ে নিচের দোয়াটি কিছু সময় পাঠ করে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করবে। আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যাক্তির দোয়া কবুল করবেন এবং তার প্রতি অসংখ্য রহমত বর্ষিত করবেন। সুবাহান আল্লাহ। দোয়া টি হলো,

রাসূল (সাঃ) এর শবে কদর নামাজের দোয়া টিঃ

আরবি উচ্চারনঃ سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ

বাংলায় উচ্চারনঃ সুবহানাল্লাহি ওয়াল্ হাম্দু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

অর্থঃ আমি আল্লাহতায়ালার গুণকীর্তন করছি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহতায়ালার জন্য, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, শবে কদরের রাতে আমার কোন দোয়া টি পড়া উচিত?’ তিনি তখন তাঁকে নিচের দোয়া টি পড়ার জন্য নির্দেশ দিলেন-

রাসূল (সাঃ) এর দোয়া টি হলো,

আরবিতে উচ্চারনঃ اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

বাংলায় উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)।

শবে কদর নামাজ কত রাকাত ও নামাজের নিয়ত

কিন্তু কেউ যদি উপরে উল্লেখিত সূরা গুলো না পারে। তাহলে সূরা ফাতিহা পড়ার পর যে সূরা গুলো পড়তে পারে, তার মধ্য থেকে প্রতি রাকাতে একটি করে সূরা মিলিয়ে নিয়ে পড়তে পারবে। এই ভাবে কম্পক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই ভালো এবং সওয়াবের।

তবে প্রতি চার রাকাত পর পর কিছু তাসবিহ, তাহলিল, জিকির করে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া কামনা করা অতি উত্তম। আর এই ভাবে সারা রাত শবে কদর নামাজ আদায় করা যেতে পারে।

বন্ধুরা, এই পবিত্র মাসে রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট নিজেকে সর্পে দেই। আর শবে কদর নামাজ কত রাকাত তা চিন্তা না করে বেশি বেশি নামাজ পড়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাই কে শবে কদরের রাতে নফল ইবাদত, কোরআন তিলোয়াত, জিকির, তাসবিহ , তাহলিল পাঠ করার তৌফিক দান করুন। আমিন

আপনি আরো পড়তে পারেন, শবে বরাত নামাজের নিয়ত ও দোয়া। 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More