ইসলামে গোসল ফরজ হওয়ার কারণ কি কি । ফরজ গোসলের দোয়া

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ কি এবং ফরজ গোসলের দোয়া

আজ আমি আপনাদের ইসলামের আলোকে গোসল ফরজ হওয়ার কারণ সমূহ কি কি? ফরজ গোসলের দোয়া সম্পর্কে জানাবো। মানুষের বিভিন্ন কারনে গোসল ফরজ হয়। গোসল ফরজ হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। আপনার আমার জানা অজানায় অনেক সময় শরীর অপবিত্র থাকে। আর এই অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর জমিনে চলাফেরা করা যায় না। এই পবিত্র দেহ সব সময় পাক রাখতে হয়। কেননা, আপনি যদি অপবিত্র থাকেন। তাহলে রহমতের ফেরেশতা আপনার কাছে থাকবে না। যতক্ষন পর্যন্ত না আপনি পবিত্রতা অর্জন করেন। আর এই পবিত্রতা হলো ঈমানের অঙ্গ। চলুন তাহলে জেনে নেই। কি করলে গোসল ফরজ হওয়ার কারণ রয়েছে এবং ফরজ গোসলের দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত।

ইসলামের বিধানে গোসল ফরজ হওয়ার কারণ

ইসলামী জীবন বিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফরজ গোসল। কেননা, অনেক সময় গোসল ফরজ হওয়ার কারণ হয়ে যায়। আমাদের জানা অজানায় গোসল ফরজ হওয়ার কারণ হয়। আর যদি কারো ওপর গোসল ফরজ হয় এবং তিনি যদি সঠিক পদ্ধতিতে গোসল আদায় না করেন। তাহলে ঐ ব্যক্তি নাপাক থাকবেন। আর এই নাপাক অবস্থায় কেউ যদি ইবাদত করে সওয়াবতো হবেই না বরং কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। শুধু নামাজ নয়। নামাজ ছাড়াও অনেক ইবাদত রয়েছে যেগুলো নাপাক অবস্থায় শুদ্ধ হয় না। ইসলামের বহু আমল সঠিকভাবে সম্পাদন করার জন্য শারীরিক পবিত্রতা অপরিহার্য। তাই এখন আমি আপনাদের জানাবো কি কি কারনে গোসল ফরজ হওয়ার কারণ হয় তার বিস্তারিত তথ্য।

গোসল ফরজ হওয়ার কারণ গুলো হলো-

  • স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে। গোসল ফরজ হওয়ার কারণ।
  • নারী ও পুরুষ মিলনে (সহবাসে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক) গোসল ফরজ হওয়ার কারণ।
  • মেয়েদের হায়েয ও নিফাস শেষ হলে।
  • ইসলাম গ্রহণ করলে (নব ও মুসলিম হলে)।
  • মৃত্যু ঘটলে।

১। স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত গোসল ফরজ হওয়ার কারণ

জাগ্রত বা ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত হওয়া গোসল ফরজ হওয়ার কারণ। ঘুমন্ত অবস্থায় উত্তেজনা অনুভব না হলেও গোসল ফরজ। কেননা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে মানুষ অনেক সময় টের পায় না। তাই কোনো ব্যক্তি ঘুম থেকে ওঠার পর যদি কাপড়ে নাপাকির চিহ্ন দেখে। তাহলে তার স্বপ্নদোষ বা বীর্যপাতের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায় গোসল ফরজ হবে। (হেদায়া ১/৪৫, আন নুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ. ২৯)

২। নারী পুরুষ সহবাসে বীর্যপাত হলে গোসল ফরজ হওয়ার কারণ হয়ঃ স্বামী স্ত্রী উভয়ে মিলনে বা সহবাসে লিপ্ত হলে দুই জনের উপর গোসল ফরজ হয়ে যায়। স্বামী স্ত্রীর সহবাসের ক্ষেত্রে স্ত্রীর গোপনাঙ্গে পুরুষাঙ্গ সর্বনিম্ন সুপারি পরিমাণ অংশ প্রবেশ করালেই উভয়ের ওপর গোসল ফরজ হওয়ার কারণ হয়। এই সহবাসে তাদের বীর্যপাত হোক আর না হোক উভয়কে গোসল করতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম)

হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি স্ত্রীর চার শাখার ( দুই হাত এবং দুই পায়ের ) মাঝে বসে তার সাথে মিলন হলে (সহবাস করলে) তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারি)

৩। মেয়েদের হায়েয ও নিফাস শেষ হলে ইসলামে তার গোসল ফরজ হওয়ার কারণ হয়ঃ নারীদের মাসিক ঋতুস্রাব (হায়েজ) হয়ে থাকে। নারীদের এই মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ হলে এবং সন্তান প্রসব করার পর রক্ত (নেফাস) বন্ধ হলে পবিত্রতার নিয়তে গোসল করা ফরজ। কেননা, মাসিক ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসব করার পর রক্তপাত অবস্থায় ঐ নারী কোন ইবাদত করতে পারবে না। যতদিন পর্যন্ত ঐ নারীর রক্ত বন্ধ না হবে ততদিন পর্যন্ত ওই নারীর ইবাদত হবে না। আর এই রক্তপাত যতদিন হবে ঐ নারী ততদিন অপবিত্র থাকবে। হাদিসে বর্ণিত আছে,

আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করিম (সাঃ) ফাতিমা বিনতে আবি হুবাইশ (রাঃ) কে বলেন, হায়েয এলে তোমরা নামাজ ছেড়ে দাও, আর হায়েয চলে গেলে তোমরা গোসল করো ও নামাজ পড়ো। নিফাস হলো হায়েযের মতো, এ ব্যাপারে কারো দ্বীমত নেই। ( বুখারী ও মুসলিম)

৪। ইসলাম গ্রহণ করলে ঐ ব্যক্তির গোসল ফরজ হওয়ার কারণ

এর প্রমাণ কায়েস ইবনে আসেম যখন ইসলাম গ্রহণ করেন,নবী কারীম (সাঃ) তাকে গোসল করার নির্দেশ দেন। (বর্ণনায় আবু দাউদ)

৫। গোসল ফরজ হওয়ার আরেকটি কারণ মৃত্যু ঘটলেঃ কেউ কেউ মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ফরজ বলে উল্লেখ করেছেন। এই কথার দলীল হচ্ছে, নবী কারীম (সাঃ) এর কন্যা যয়নব কে যারা গোসল দিচ্ছিলেন। তিনি তাদেরকে বলেন, যয়নব কে তিনবার গোসল করাও, অথবা পাঁচবার অথবা সাতবার অথবা এর চাইতে অধিকবার যদি তোমরা তা প্রয়োজন মনে কর। (বুখারি, অধ্যায়ঃ জানাযা, অনুচ্ছেদঃ মৃত্য কে পানি ও বরই পাতা দিয়ে গোসল দেয়া ও অজু করানো। হাদিস- ১২৫৩। মুসলিম, অধ্যায়ঃ জানাযা, অনুচ্ছেদঃ মৃতকে গোসল দেয়া, হাদিস- ৯৩৯।

-Advertisements-

তাছাড়া বিদায় হজ্বে আরাফা দিবসে জনৈক এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় বাহন থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু বরণ করলে নবী কারীম (সাঃ) বলেন, তোমরা তাকে পানি ও বরই পাতা দ্বারা গোসল দাও এবং পরিহিত দুই কাপড়েই কাফন পরাও। (বুখারি, অধ্যায়ঃ জানাযা, অনুচ্ছেদঃ ইহরামকারী মৃত ব্যক্তিকে কিভাবে কাফন পরাতে হয়। হাদিস- ১২৬৭। মুসলিম, অধ্যায়ঃ হজ্ব, অনুচ্ছেদঃ ইহরামকারী মৃত্যুবরণ করলে কি করতে হবে। হাদিস- ১২০৬

কেননা নবী কারীম (সাঃ) এ সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন, মৃত্যু ব্যক্তিকে গোসল করানো ফরজ। কিন্তু এটা জীবিতের সাথে সম্পর্কিত। কেননা মৃত্যু বরণ করার কারণে উক্ত ব্যক্তির উপর শরীয়তের বাধ্যবাধকতা শেষ হয়ে গেছে। তাই এখন জীবিতদের উপর গোসল ফরজ হওয়ার কারণ হচ্ছে, তাকে গোসল করিয়ে দাফন করা।

এছাড়াও মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَإِن كُنتُمۡ جُنُبٗا فَٱطَّهَّرُواْۚ

তোমরা যদি নাপাক (জানাবাত) অবস্থায় থাকো, তবে নিজেদের দেহ (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নাও। (সুরা মায়েদা ৬)। পবিত্র কোরআনে অন্য আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন, যাঁরা অধিক পবিত্রতা অর্জন করেন, তাদের প্রশংসা করেছেন।

ইসলামের বিধি বিধান অনুযায়ী ফরজ গোসলের দোয়া

আমরা যে কোন কাজ করতে গেলে প্রথমে (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْم) “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” অর্থাৎ দয়াময় মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করছি’বলে থাকি। তেমনি ফরজ গোসলের দোয়া পড়তে গেলেও প্রথমে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বলতে হবে । নিম্নে ফরজ গোসলের দোয়া দেওয়া হলো।

ফরজ গোসলের দোয়া আরবি উচ্চারন

اَشْهَدُ اَنْ لَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ

اَللَّهُمَّ اجْعَلْنِىْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِىْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ

ফরজ গোসলের দোয়া বাংলা উচ্চারন

আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসুলুহু। আল্লাহুম্মা-ঝআলনি মিনাত-তাওয়্যাবিনা ওয়াজআলনি মিনাল মুতাত্বাহহিরিন।

ফরজ গোসলের নিয়ত বাংলা উচ্চারনঃ নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফয়িল জানাবাতি।

বন্ধুরা, ইসলামের আলোকে গোসল ফরজ হওয়ার কারণ গুলো কি কি এবং ফরজ গোসলের দোয়া সম্পর্কে যা জানতে পেয়েছি। আমরা যেন ততটুকু আমল করতে পারি। আর আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাই নাপাকি থেকে হেফাজত করে পাক থাকার তৌফিক দান করুক। আমিন

Advertisements

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More