তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন । তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল

তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন

রমজান মাসের তারাবির নামাজ কিভাবে পড়তে হয়? তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল ? তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন কি? তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত কিভাবে করবো? আমরা অনেকেই এই বিষয়ে অজ্ঞ। আজকে আমরা আলোচনা করবো তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এবং তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে। চলুন শুরু করা যাক –

তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন । তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল দোয়া ও মোনাজাত

মাহে রমজান মাসের তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন

রমজান মাসে তারাবির নামাজ গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেন, মহান আল্লাহ তাআলা এ মাসের সিয়াম রাখা ফরজ করেছেন এবং এ মাসের কিয়াম তথা রাতের নামাজ ( তারাবির নামাজ ) নফল করে দিয়েছেন। আমাদের জানা জরুরী রমজান মাসের এই তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন কী ?

পবিত্র রমজানের তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন

রমজানের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম : তারাবির নামাজ দুই রাকাআত করে আদায় করতে হয়। দুই রাকাত করে প্রতি চার রাকাআত পর পর বিশ্রাম নিতে হয়। বিশ্রাম নেয়ার সময়টাতে আল্লাহর বিভিন্ন গুণবাচক নাম ও তাসবীহ তাহলীল পাঠ করা হয়। এই সময়টাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়। অনেকে প্রতি চার রাকাআত পর পর প্রচলিত একটি দোয়া পড়ে থাকন। এবং তারাবির নামাজ শেষ হলে একটি মোনাজাত করা হয় যা তারাবির মোনাজাত নামে অভিহিত।

তারাবির নামাজের দোয়া

পবিত্র রমজান মাসে তারাবির নামাজের চার রাকাত পর বিশ্রাম নেয়া হয় ও একটি দোয়া পাঠ করা হয়। রমজান মাসের তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন এ বর্ণিত চার রাক পর যে দোয়া পড়া হয় তা নিচে দেওয়া হল।

তারাবির নামাজের দোয়া আরবিতেঃ

سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

তারাবির নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণঃ সুবহানাজিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানাজিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।

রমজানের তারাবির নামাজের মোনাজাত

-Advertisements-

রমজানের তারাবি নামাজের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে অনেক মত পার্থক্য আছে। যে যত রাকাআত তারাবি নামাজ পড়ুক না কেন, অনেকেই চার রাকাআত পরপর মোনাজাত করে থাকেন আবার অনেকে এমন আছে যারা পুরো নামাজ শেষ করে মোনাজাত করে থাকেন।
তারাবির মোনাজাতের ক্ষেত্রেও কুরআন ও হাদিসের মাসনুন দোয়া গুলো পড়া যেতে পারে। তবে তারাবির নামাজের মোনাজাত এ বহুল প্রচলিত একটি দোয়া অনেকেই পড়ে থাকেন।

রমজানের তারাবির মোনাজাত আরবিতেঃ

اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বাররু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।

আমরা অনেকেই তারাবির নামাজ খুব দ্রুত অথবা তাড়াতাড়ি নামাজ আদায় করে থাকি। এমনভাবে খুব দ্রুত তারাবি নামাজ আদায় করা ঠিক নয়। তারাবির নামাজ পড়তে হবে ধীর স্থিরভাবে এবং এটাই উত্তম পন্থা। ধীরস্থিরভাবে তারাবি নামজ পড়লে তাহারির নামাজের মর্যাদা ও সৌন্দর্য উভয়ই প্রকাশ পায়।

রমজান মাসের তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল

রমজান মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল তারাবির নামাজ। কিন্তু আমাদের মনে প্রশ্ন আসে তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল। তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল তা আমরা আজকে হাদিস থেকে দেখবো।

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এই নিয়ে অনেক দ্বিমতে পরে যাই। তারাবির নামাজ সকল নারী ও পুরুষের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তবে পুরুষরা মসজিদে জামাতের সাথে তারাবির নামাজ আদায় করবে। আর মহিলারা ঘরে তারাবির সুন্নত নামাজ আদায় করে নিবে। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধর এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতকে আঁকড়ে ধর এবং তার উপর তোমরা অটুট থাক। (আবু দাউদ ৪৬০৭, তিরমিজী ২৬৭৬)

রাসুলুল্লাহ (সা) তারাবির নামাজের জন্য রাতের কোন বিশেষ সময় নির্দিষ্ট করে দেননি। তবে তারাবি নামাজ এশার নামজের পর থেকে শুরু করে সুবহে সাদিকের পূর্বে আদায় করে নিতে হবে। হযরত মুহাম্মদ (সা) বেশিরভাগ সময়ই রাতের প্রথমাংশ সময়ে বিশ্রাম নিতেন এবং শেষ সময়ে তারাবি নামাজ আদায় করে নিতেন।

রমজান মাসের তারাবির নামাজ সুন্নত

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল এ বিষয়ে প্রশ্ন হলে তার উত্তর তারাবির নামজ সুন্নত। তারাবীর নামাজ সুন্নত হওয়াকে যে অস্বীকার করবে বা অবৈধ মনে করবে সে বিদাআতের আবিস্কারক, পথভ্রষ্ট। তাহতাবী কিতাবে রয়েছে যে, তারাবীর নামাজ সুন্নত, এই নামাজ বর্জন এবং ছেড়ে দেওয়া জায়েয নেই। (কামুসুল ফিকহ ২/৪৪৮)

রমজান মাসে তারাবির নামাজ জামাতে পড়া এনং সম্পূর্ণ কুরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আমাদের নবী করীম (সা) নিজে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন ও সাহাবায়ে কিরামদেরকে তারাবির নামাজ পড়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজ জামাতে আদায় ও কুরআন মজিদ খতম করা অধিক সওয়াবের কাজ। নিজ ধরে সূরা কিরাআতের মাধ্যমে তারাবির নামাজ আদায় করলেও সওয়াব পাওয়া যাবে।

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল মসলিম উম্মাহকে সুন্নত তারাবির নামাজ পড়ার এবং তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন মেনে সুন্দর, ধীরস্থিরভাবে তারাবির নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। তারাবির নামাজের মধ্যে প্রয়োজনীয় দোয়া ও মোনাজাত পড়ার মাধ্যমে আমাদের সমস্ত গুনাহ মহান আল্লাহ তাআলা মাফ করুন। আমিন।

Advertisements

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More